সময় শেষ: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

সময় শেষ: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘যতই চিল্লাচিল্লি করেন। জাপান, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, সৌদি আরব, কাতার, চীনে যান-কোনো লাভ নেই, সময় শেষ।’

শুক্রবার বিকেলে ঢাকার রিং রোডের শ্যামলী ক্লাব মাঠে এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। মহানগর উত্তর বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হুঁশিয়ারি জানান। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলতে চাই, এর (সরকার) সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যায় কোনো আদেশ মানা হলে তা জনগণের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বলতে চাই, এই সরকার দেশে-বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘এখন দেশের মানুষ যেমন চায়, গণতান্ত্রিক বিশ্বও চায়-এখানে একটা সুষ্ঠু, সঠিক, অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক এবং তারা জানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না। তাই দয়া করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যেখানে আপনারাও চিহ্নিত হয়ে যাবেন।’

কেন্দ্রঘোষিত চার দিনের কর্মসূচি হিসেবে আজ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশালসহ সব মহানগর ও ২৭টি জেলায় একযোগে এই জনসমাবেশের কর্মসূচি হয়।

ঢাকায় শ্যামলীর সমাবেশ বেলা আড়াইটায় শুরুর ঘোষণা থাকলেও এর আগেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে রিং রোডে অবস্থান নেন শত শত নেতা-কর্মী।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখনো সময় আছে, জনগণের চোখের ভাষা বুঝুন, জনগণকে মুক্তি দিন, জনগণের যে দাবি-সে দাবি মেনে নিন।’

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, লুটপাটের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা মানুষের ভাতের ও ভোটের অধিকার হরণ করেছে। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা চুরমার করে দিয়েছে। তাই এই সরকার এই সময়ে টিকে থাকার জন্য মরণকামড় দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দিচ্ছে।

‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’

খুলনার জনসমাবেশে গুলির ঘটনার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনাতে গুলি হয়েছে। আরে গুলি করে জনগণের এই আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না।’ এ সময় তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, বন্ধ করা গেছে? সবাই ‘না’ বললে তিনি বলেন, ‘১২ বছর ধরে, ১৫ বছর ধরে চেষ্টা করছেন, পারেননি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বলে কী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি কবরে চলে গেছে, মিউজিয়ামে চলে গেছে। তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আপনারা যখন চাইছিলেন, তখন সেটা মিউজিয়ামে যাই নাই? সেদিন তো বলেছিলেন, এই শেখ হাসিনাই বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোটাই মানব না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদেরও পরিষ্কার কথা, এই দেশের মানুষ একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জন্য, ভোটের রেজাল্টকে ঘরে আনার জন্য-তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন প্রক্রিয়া মানবে না।’

শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চাইসমাবেশে মির্জা ফখরুল নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা কোনো সংঘাত চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। সে জন্য নির্বাচনই একমাত্র উপায়। সেই নির্বাচন কখনোই আওয়ামী লীগের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল গত নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের কথা উল্লেখ করেন। ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখেছি ২০১৮ সালে, আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে সংলাপ করলেন, বললেন কোনো গ্রেপ্তার হবে না, হয়রানি করা হবে না। কিন্তু নির্বাচনের আগেই আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হলো। অসংখ্য মামলা, কেউ ভোট দিতে যেতে পারে নাই।’

নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাটা কোথায়

নির্বাচনের কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজেরাই নিজেদের ঠিক রাখতে পারে না। কেমন নির্বাচন করবেন, তার প্রমাণ তো আজকের পত্রিকায় দেখলাম। আপনারা (সরকার) নতুন আইন করতে যাচ্ছেন যে নির্বাচন কমিশন কোনো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাটা কোথায়।’

ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সব মানুষকে কী বোকা মনে করেন? এভাবে আর কত দিন প্রতারণা করে চালাবেন। পারবেন না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানসহ যে ৩৫-৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে এবং এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সংসদ রাখবেন, আর আমরা নির্বাচন করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে? এমপিরা এমপি থাকবেন, আর ইলেকশন হবে, সেই নির্বাচন কোনো দিন সুষ্ঠু হবে? হবে না।’

জনতার উত্তাল তরঙ্গ ঠেকিয়ে রাখা যাবে না

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণ–আন্দোলন সৃষ্টির আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মোখাকেও উনি নাকি ঠেকাইছেন। এর আগে করোনাকে ঠেকাইছিলেন, এইবার নাকি মোখাকে ঠেকাই দিছেন। করোনা ঠেকানো যেতে পারে, মোখাকে ঠেকানো যেতে পারে, কিন্তু জনতার উত্তাল তরঙ্গ  যা আসছে, তাকে কখনো ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উত্তরের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, কামরুজ্জামান রতন, রফিকুল ইসলাম বকুল, উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক প্রমুখ।