পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা, ছাত্রলীগ পরিচয়ে পেলেন ছাড়া

পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা, ছাত্রলীগ পরিচয়ে পেলেন ছাড়া

পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটকের আট ঘণ্টা পর দুজনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আটক হওয়ার পর ফেরদৌস হাওলাদার নামের একজন রাজধানীর রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়েছেন। শাকিল আহম্মেদ নামের অন্যজন নিজেকে কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদপ্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি অংশের সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল থেকে তাদের আটক করার কথা জানায় হাতিরঝিল থানা-পুলিশ। আজ শনিবার সকাল ১০টায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

একজন ভুক্তভোগী প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাতে মোটরসাইকেলে করে হাতিরঝিল হয়ে বাসায় ফিরছিলেন তিনিসহ দুজন। রাত দুইটার দিকে সিদ্দিক মাস্টারের ঢাল এলাকায় আসার পর দুই ব্যক্তি ইশারা দিয়ে তাদের মোটরসাইকেল থামান। তারপর ‘কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাচ্ছেন’-এসব প্রশ্ন শুরু করেন। তাদের আচরণ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো। একপর্যায়ে তাদের শরীর তল্লাশি করে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে হঠাৎ পুলিশের কয়েকজন সদস্য এসে পুরো ঘটনা শুনে ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করেন।

ওই ভুক্তভোগীর ভাষ্য, অভিযোগ নেওয়ার কথা বলে তাদের দুজনকেও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অভিযোগ লেখাও হয়। কিন্তু অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়নি। সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযোগ নেওয়া হবে বলে থানায় তাদের বসিয়ে রাখা হয়। অভিযোগ নেওয়া হবে না বুঝতে পেরে তারা থানা থেকে চলে আসেন।

আটক দুজনকে ছাড়িয়ে নিতে রাতেই থানায় ছুটে যান হাতিরঝিল থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল শাওন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আটক হওয়া দুজন ছাত্রলীগের পদে নেই। তবে তারা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, পদপ্রত্যাশী। তিনি দুজনকেই চেনেন। পুরো ঘটনা ভুল-বোঝাবুঝি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের কিছু নেই।’

আটক শাকিলের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। আর ফেরদৌস হাওলাদারের নম্বর পাওয়া যায়নি।

পুলিশ যা বলল

হাতিরঝিল থানা-পুলিশের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, দুজনকে আটকের পর প্রথমেই জানার চেষ্টা করা হয় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কি না। তারা কোনো উত্তর দেননি। থানায় নিয়ে আসার পর দুজনই ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেন।

ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয় হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল আলমের নেতৃত্বে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ না দেওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাতিরঝিল থানা-পুলিশের এক সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হকের নির্দেশে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ডিসি আজিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তারা পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, বিষয়টি এমন নয়। তাদের গভীর রাতে রাস্তায় দেখা গেছে, আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি জানতে আজ সন্ধ্যায় হাতিরঝিল থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাদের আটক করা হয়েছিল, তারা ছাত্রলীগের নেতা। তাদের একজন রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। পুরো ঘটনা ভুল–বোঝাবুঝি। যাকে ভুক্তভোগী বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। এ কারণে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। এ কারণে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ওই দুজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নেই।

‘চাপ প্রয়োগের’ পর ভুক্তভোগী যা বললেন

থানা থেকে বের হওয়ার পর আজ সন্ধ্যায় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয়ে মনিরা চৌধুরী নামের একজন এই প্রতিবেদককে ফোন করেন। তিনি জানতে চান শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে থানায় কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে কি না। তিনি দাবি করেন, ভুক্তভোগীর কোনো অভিযোগ নেই।

পরে মনিরা চৌধুরী গ্রুপ কলে ভুক্তভোগীকে যুক্ত করে ঘটনাটি বলতে বলেন। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি আবারও পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি দেশের বাইরে থাকেন, এ কারণে মামলা করতে চান না। মামলা করে কোনো লাভ হবে না। তবে আজ বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পুলিশ প্রায় আট ঘণ্টা বসিয়ে রেখে অভিযোগ না নেওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে চলে যান।

রামপুরা থানা ছাত্রলীগের এক নেতা প্রথম আলোকে জানান, মনিরা চৌধুরী ৯৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।-প্রথম আলো