ঢাকার ৮০ শতাংশ জলাধারই ভরাট

ঢাকার ৮০ শতাংশ জলাধারই ভরাট

গত দুইদিন আগে বৃহস্পতিবারের রাত ছিল রাজধানীবাসীর জন্য বিভীষিকাময়। যারা ওই রাস্তায় ছিলেন তাদেরকে টানা ছয় ঘণ্টার বর্ষণে তীব্র যানজট, জলজট আর প্রাণহানি প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বশীলদের কথার বেলুন সেদিন একেবারে চুপসে যায়।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, আইন ও নীতির তোয়াক্কা না করেই ঢাকার ৮০ শতাংশ জলাধার ভরাট; বছরের পর বছর রাজধানীর ভেতরে- প্রান্তে জলাধার ভরাট করা হয়েছে।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২২০টির বেশি ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ছিল। পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়াই পানির ধারণক্ষমতা কমে যায় ফলে অল্প বৃষ্টিতে ড্রেন পূর্ণ হয়ে রাস্তা তলিয়ে যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বারবার বলা হয় জলাধার ধ্বংস করা যাবে না তবুও এক্সপ্রেসের জন্য হাতিঝিলের একাংশ ভরা করা হয়েছে, আবার দেখছি কল্যাণপুরের জলাধার ভরাট করা হচ্ছে, এখনও কালশিতে ভরাট চলছে, কেরানীগঞ্জে চলছে। এভাবে জলাধার ভরাট করে যদি অল্প কিছু ড্রেনের ব্যবস্থা করা হয় তবে ঢাকার টোটাল বৃষ্টির পানি ধারণ করা সম্ভব হবে না।

পানির ধর্ম নিচে গড়ানো। এই গড়ানো পানির অনেকটাই শুষে নেয় মাটি। কিন্তু রাজধানীতে ক্রমশই মাটির দেখা পাওয়া ভার হয়ে উঠছে। একে তো খাল-পুকুর ভরাটের প্রতিযোগিতা, আরেক দিকে সমতলজুড়ে সিমেন্ট আর পিচ ঢালাইয়ের প্রবণতা।

মো. আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ জায়গা কংক্রিট দিয়ে ঢাকা ফলে বাসার আশেপাশে জায়গায় মাটি দেখা যায় না, মাটির যে শোষণক্ষমতা সেটি আর নেই।

 

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ প্রকৌশলী অধ্যাপক সারওয়ার জাহান জানান, পানি নিচে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না, এখন বিদেশেও আমরা তাই দেখতে পাই কিন্তু তাদের সমস্যা হচ্ছে না কেননা তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড সিস্টেম রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিস্তৃত হচ্ছে নগর, সেই সাথে বিরূপ প্রভাবও বাড়ছে প্রকৃতির। তাই জলাবদ্ধতা সমাধানে সবার আগে বাঁচাতে হবে ঢাকার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো। আর দূর করতে হবে পরিকল্পনার গলদ।