নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। এতে ড. ইউনূসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার আদালত এর রায় ঘোষণা করেন।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করা, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া। আদালতে ড. ইউনূসের সর্বোচ্চ সাজা ও জরিমানা দাবি করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী। অন্যদিকে ড. ইউনূসের পক্ষে রয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মামলা চলাকালীন ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন। ন্যায়বিচার দাবি করে তিনি আদালতকে বলেন, আমি যা করেছি সবই মানুষের জন্য করেছি। ব্যক্তিগত লাভের জন্য কোনো কিছু করিনি। আমি যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছি কোনোটিতেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য করিনি। সেটা গ্রামীণ ব্যাংক কিংবা অন্য বড় কোনো প্রতিষ্ঠানই হোক। ড. ইউনূস বলেন, মানুষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে মুনাফা করার জন্য। আমরাও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে বড় করেছি।

কিন্তু এসব কার্যক্রমকে আমরা সামাজিক ব্যবসা বলি। যেখানে ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপকার হয়। এর মূল বিষয়টি হলো- এসব ব্যবসায় যিনি বিনিয়োগ করছেন তিনি কোনো মুনাফা নেবেন না। কাজেই আমি হচ্ছি এই সামাজিক ব্যবসার প্রবক্তা। বিশ্বব্যাপী এটি আমি প্রচার করার চেষ্টা করেছি। এসব কার্যক্রমের ভেতরে আমার ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। মানুষের উপকার করাটাই আমাদের লক্ষ্য। কোনোটাতেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবো- এ রকম কোনো উদ্দেশ্য আমাদের মধ্যে ছিল না। সুতরাং যেটার উদ্দেশ্য লাভবান হওয়া না সেটা আমি কার জন্য নেবো, কাকে দেবো? ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মালিকানা মুক্ত থেকেছেন দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, আমার উদ্দেশ্য ছিল আমি মালিকানা মুক্ত থাকবো। সে জন্য কোনো কিছুতেই আমি মালিক হইনি। আমি সেটাই ফলো করে যাচ্ছি। যেখানে আমি নিজেই মালিকানামুক্ত থাকতে চাই- সেখানে আমি আরেকজনের কাছ থেকে কেড়ে আনবো কেন?

ইউনূস ছাড়াও এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। আদালতে তারাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।

২০২১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।

এতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

মামলা বাতিলের আবেদন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন ইউনূস। কিন্তু গত মে মাসে তার আবেদন আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেলে মামলা চালানোর বাধা দূর হয়।

এরপর চলতি বছরের ৬ই জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

গত ২২শে অগাস্ট থেকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৮ই নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন আসামিরা।

২৪শে ডিসেম্বর চলে দুইপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্কের আইনি বাহাস। ইতি টানা হয় ১১ কার্যদিবসের শুনানির, যা শুরু হয়েছিল ২১শে নভেম্বর।

আদালতে ইউনূসের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ হায়দার আলী।