একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: আলী রীয়াজ

একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: আলী রীয়াজ

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কিংস পার্টির সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিরোধীদের সাথে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিকে এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। তিনি গ্লোবেলি নিউজ পডকাস্টে সাংবাদিক আরিফ রফিকের সঙ্গে কথোপকথনে এসব কথা বলেন ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের দিন। এতে তিনি বলেন, রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।

২০২৪ এমন একটি বছর, যে বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক নির্বাচন হতে চলেছে। এককথায় বলা যায় ২০২৪ বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বছর। তার শুরুটা হয়ে গেলো বাংলাদেশ থেকে। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করছেন এবং তার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসবে তা আগে থেকেই প্রায় নিশ্চিত ছিলো। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। এর নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

২০১৮ সাল থেকে আটক আছেন তিনি। শেখ হাসিনার আশা, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া এবং বিএনপি শিগগিরই নিঃশেষ হয়ে যাবে। যদিও বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল তবুও আলী রীয়াজ মনে করেন যে- এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনৈতিক দৃশ্যপট নির্ধারণ করতে পারে। একটি প্রকৃত বিরোধী দল আদৌ টিকে থাকবে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কিংস পার্টির সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিরোধীদের সাথে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপিকে এক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

বাংলাদেশ প্যারাডক্স: মিথ এবং বাস্তবতা
প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যেও টিকে থাকা বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশিদের ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার করেছে। দুর্বল শাসন এবং ব্যাপক দুর্নীতির মধ্যেও দেশের এতো দ্রুত উন্নয়ন অনেক অর্থনীতিবিদকেও বিভ্রান্ত করেছে। অনেকে একে ‘বাংলাদেশ প্যারাডক্স’ বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে সরকারি অর্থনৈতিক তথ্য চিত্তাকর্ষক। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় ৬.৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আলী রীয়াজ সতর্ক করেছেন যে, এই পরিসংখ্যান সন্দেহজনক। তিনি বলেন, হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদীরা তাদের বৈধকরণের প্রভাবের জন্য ‘নিজস্ব ডাটা’ তৈরি করার ক্ষমতা রাখেন। যদিও আলী রীয়াজ মনে করেন যেমন, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই দশকে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেখেছে। এই অর্থনীতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এবং উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে স্বল্প মজুরির শ্রমিকরা। এই শ্রমিকরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছেন। ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়ছে। আর তাই শেখ হাসিনার আমলে বাড়ছে অসন্তোষ।

ক্রমবর্ধমান দমন ও ক্রোধ
গত সপ্তাহে গ্রামীণ ব্যাংকের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করা প্রমাণ করে শেখ হাসিনা বিরোধী কণ্ঠকে দমন করার জন্য কতটা মরিয়া। আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের একসময়ের শক্তিশালী সুশীল সমাজ ‘কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে’। রাজনীতিকরণ এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের জোড়া আঘাতে সুশীল সমাজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশ ক্রমেই ‘নজরদারি রাষ্ট্রে’ পরিণত হবার দিকে এগোচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার অধীনে তারা সহ অন্যদের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। একই সময়ে জ্বালানি খাত এবং নন-পারফর্মিং ব্যাঙ্ক ঋণের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ অভিজাতরা বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে, যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রকৃত গণতন্ত্র এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান- যেমন নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। রোববার শেখ হাসিনার বিজয় এককথায় ঝড়ের আগের শান্ত রূপ ।