সত্য সামনে এলে আ'লীগের রাজনীতি থাকে না: মোশাররফ

সত্য সামনে এলে আ'লীগের রাজনীতি থাকে না: মোশাররফ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সত্য ঘটনা সামনে এলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকে না। আজকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে যদি মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ঘটনা লেখা হয় তাহলে আওয়ামী লীগ যে মিথ্যাচার করছে সব ক্ষেত্রে ধরা পড়ে যাবে। তবে এটা সত্যি- যে যেই বই পড়ুক না কেন, যা যেখানে লেখা থাকুক না কেন ইতিহাস ইতিহাসই।

‘ইতিহাস কেউ লিখতে পারে না, বিকৃত করতে পারে। সময়মতো সত্যিকার ইতিহাসকে ঐতিহাসিকরা লিখবেন। এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস দেশে-বিদেশের বইয়ে ইতোমধ্যে লেখা আছে। এই লেখা আওয়ামী লীগ মুছে ফেলতে পারবে না।’

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তন প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী ‘মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনীর’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার আহ্বান জানান।

বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ‘সাজসজ্জা, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনী কমিটি’র আয়োজনে এই অনুষ্ঠান হয়। সকাল ১১টায় বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জাতীয় পতাকা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।

বিএনপির একদল শিল্পীর পরিবেশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত এই মেলা খোলা থাকবে সর্বসাধারণের জন্য। মেলায় বিশিষ্ট লেখকদের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, গবেষণা, গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও বিশ্বেষণধর্মী বই রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বইমেলায় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর আলোকচিত্র ও চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে।

উদ্বোধনের পর মেলা প্রাঙ্গণে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। বইমেলা উপলক্ষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের বইমেলার উদ্বোধন করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা জিয়াউর রহমান করেছেন- এটা সত্য ঘটনা, সত্য ইতিহাস। এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আজকে যারা গায়ের জোরের সরকার তারা শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ওই মুক্তিযুদ্ধের সূচনার ঘটনাকেও বিকৃত করছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। সেজন্য আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। আমরা বলতে চাই, সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেওয়া যায় না, কেউ ধামাচাপা দিতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় তারা ভয় পায়। কেননা এই আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতারা যে যেই ক্ষেত্রে ভুল করেছে, ব্যর্থ হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে বিএনপি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সফল হয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভূমিকা রেখেছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে আমাদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা সফল করতে হবে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট চোরদের পায়তারা শুরু হয়েছে। এদের প্রতিহত করতে হবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সব দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, সবসময় ইতিহাসকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে। বিশ্বের কোনো দেশে মুক্তিযুদ্ধকে বেচাবিক্রি করার কালচার নেই। একমাত্র বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে রাজনৈতিক বেচাবিক্রি ও এটাকে পুঁজি করে বেঁচে থাকতে চায়। আর এটা ক্ষমতাসীনরা যখন করে তখন সেটা ইতিহাস তো হয় না, এটা প্রোপাগান্ডা হতে পারে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশনায় ‘বস্ত্র ও পোষকশিল্পের স্থপতি শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া অতিথিদের চিত্রশিল্পী হীরা সোবহান কয়েকটি চিত্রকর্ম উপহার দেন।

স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ‘সাজসজ্জা, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনী কমিটি’র আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, জাসাসের আহসানুল হক চৌধুরী, আলোকচিত্রী নুর উদ্দিন আহমেদ নূরু, পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি কাজী জহিরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।