বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দুর্নীতির খরচ মেটাচ্ছে সরকার: মির্জা আলমগীর

বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দুর্নীতির খরচ মেটাচ্ছে সরকার: মির্জা আলমগীর

বিদ্যুতখাতে দুর্নীতির ব্যয় মেটাতে সরকার দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনারা লক্ষ্য করেছেন গতকাল রাতে বিদ্যুতের দাম আরও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এই কয়েক মাসের মধ্যে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো।'

তিনি আরও বলেন, দাম বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ খাতে সরকারের দুর্নীতি দায়ী। এ কারণে বাড়তি ব্যয় মেটাতে তাদের (সরকার) এখন জনগণের পকেট থেকে টাকা নিতে হবে। সেই কারণে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।'

'বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কল-কারখানায় সমস্ত উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবনযাপনের খরচ বাড়ছে, জীবনের ওপর চাপ পড়ছে।'

ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ১০ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়। গত তিনদিনে রংপুর, খুলনা, সিলেট বিভাগের মতবিনিময় শেষ হয়েছে। আজকের সভায় বরিশাল বিভাগে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় লন্ডন থেকে স্কাইপে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

'চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম ভয়ানকভাবে বেড়েছে'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে চাল-ডাল-তেল-লবণের মূল্য ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। দেশের মানুষ চালের জন্য টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিচ্ছে। মানুষ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে। সারা দেশে যখন দুর্ভিক্ষের মতো হাহাকার তখন আমাদের অনির্বাচিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হাওড় এলাকায় রাষ্ট্রপতির বাড়িতে গেছেন। সেখানে একটি উৎসব হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় পত্রিকায় দেখেছেন তাকে প্রায় ২৩ পদের মাছ দেওয়া হয়েছে…।'

তিনি বলেন, 'খাবারের অভাবে থাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে এটা রসিকতা। মানুষ এটা কোনোদিন ক্ষমা করবে না।'

'এটা আমাদেরকে আরেকটা সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছেন জানেন যে ১৯৭৪-৭৫ সালে তখনকার রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের দুর্নীতি-অব্যবস্থার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, লাখ লাখ মানুষ না খেতে পেরে মারা গিয়েছিল।'

'প্রাথমিক বৃত্তির ফল প্রকাশেও ব্যর্থ'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করার চার ঘণ্টার মধ্যে সেই ফলাফল স্থগিত করা হলো। অর্থাৎ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাই শুধু নয়, এই প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলও সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। পুরোপুরি ব্যর্থ।'

'অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের অত্যাচার-নির্যাতনে আজকে মেয়েরা পর্যন্ত নিরাপদ নয়। সেখানে কি ভয়াবহ নির্যাতন হয়েছে যে, হাইকোর্ট বলেছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোতে একই অবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।'

তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তার মধ্যে তাদের লুটপাট বন্ধ নেই। তারা রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি করে পাচার করে দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো থেকে তারা টাকা পাচার করে বিদেশে বাড়ি তৈরি করছে।'

'গতকাল একটা পত্রিকায় দেখলাম যে, এক ব্যক্তির নিউইয়র্কে ৪০টি বাড়ি। তারা বাংলাদেশে লুটপাট করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষ খাদ্যাভাবে বসবাস করছে।'

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।