আবদুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ীতে বিএনপির সমাবেশ

জনগণ এবার রুখে দাঁড়িয়েছে

জনগণ এবার রুখে দাঁড়িয়েছে

সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে একই সময়ে অনুষ্ঠিত আবদুল্লাহপুরের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। পৃথক দুটি সমাবেশে সরকারের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, সরকার খুন-গুম, নির্যাতন করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় টিকে আছে। একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায় তারা। কিন্তু দেশের জনগণ এবার রুখে দাঁড়িয়েছে। দয়া করে পদত্যাগ করে দেশের জনগণকে রেহাই দেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। 

আবদুল্লাহপুরের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেছেন, এখনো সময় আছে, আপনি দয়া করে পদত্যাগ করেন। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, খুন ও গুম হয়েছে। এটা আর আমরা দেখতে চাই না। মানুষের মুক্তির জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আপনি দয়া করে পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। তারা নির্বাচন করবেন।

আব্দুল্লাহপুরে পলওয়েল কারনেশন শপিং সেন্টারের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ বিকাল ৩টার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয়। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নাই। আমরা পথে নেমেছি। এই আন্দোলনকে আরও তীব্র করতে হবে। আর এদেশে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ ইসি গঠন করতে হবে এবং মানুষকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এখানে সব তরুণ আর যুবকদের মুখ। আমি অত্যন্ত আশাবাদী হচ্ছি। আমরা এই সরকারকে আর দেখতে চাই না। এটাকে সরকার বলে না। এটা জবরদখলকারী শাসকগোষ্ঠী। তারা জনবিচ্ছিন্ন। তাদের সঙ্গে কোনো মানুষ নেই। সে কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্যদিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির মধ্যদিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। 

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি টিম পাঠিয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই টিমের সদস্যরা তাদের দেশে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই কথাগুলো বিশ্বের সবাই বিশ্বাস করেন এবং তারা সবাই বলেছেন। এমনকি জাতীয় পার্টিও বলেছে, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, চিকিৎসার জন্য জরুরি অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নিয়ে গেছে। এবার দুইদফা তাকে সিসিইউতে নেয়া হলো। তিনি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ। এই সরকারের বিচার বিভাগ মিথ্যা মামলায় ৫ বছর আগে তাকে কারারুদ্ধ করেছেন। এরপরে তাকে গৃহান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। আর শর্ত দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য তিনি বাইরে যেতে পারবেন না। চিকিৎসা ব্যাপারটা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কারাগারে থাকলেও সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে। সেই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হলে তাকে বিদেশেও পাঠাতে হবে। আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, বেগম জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাকে যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো হয় তাহলে যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে এবং তাদের জবাব দিতে হবে। 

এর আগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বেলা ১টা থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ এবং হাতে ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

যাত্রাবাড়ীর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ১৫ বছর ধরে এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে আমাদের কতো ভাই প্রাণ ত্যাগ করেছে।বাংলাদেশের জেলে আমাদের কতো ভাই কষ্ট করছে। আমরা আর এই জুলুম সইতে পারবো না। জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি।

গতকাল বিকালে যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আব্বাস  বলেন, আজকে এই সরকার পতনের লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছে। মিছিল, পদযাত্রা, রোডমার্চ হচ্ছে। আপনারা প্রস্তুতি নিন, আমরা এমন আন্দোলন করবো সরকারের তখতে তাউস ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। এই অত্যাচারী-লুটেরা সরকারকে আমরা ক্ষমতায় দেখতে চাই না।

তিনি বলেন, এই সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে। তারা খুন-গুম-নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ১৫ বছরেও তাদের ক্ষমতার লোভ যায় না। হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব খান কেউ টিকে থাকতে পারে নাই। সবাইকেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। তাদের সাজা পেতে হয়েছে। 

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারের নেতারা ডিসি-এসপিদের বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় না থাকলে ডিসি-এসপিদের চাকরি থাকবে না। আরও বলেন, কেউ বাঁচতে পারবে না। কেন বলে- কর্মীদের ভয় দেখায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা কিন্তু হত্যাকারী নয়, খুনি-ডাকাত নয়। আওয়ামী লীগের লোকও এদেশের নাগরিক-বিএনপি’র লোকও এদেশের নাগরিক। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এদেশের নাগরিক। ডিসি-এসপিরা হলো সরকারের কর্মচারী। কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি অপরাধ করেন দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু বিএনপি কারও চাকরি খাওয়ার, কারও হত্যা করার রাজনীতি করে না। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি করে না। কিন্তু সরকার যে জুলুম-অত্যাচার করছে তা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার। 

তিনি বলেন, মানুষের জীবনের দাম কমে গেছে। আর সবকিছুর দামই বেড়েছে। ডেঙ্গুতে লোক মারা যাচ্ছে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। কিছুদিন আগে করোনায় লোক মারা গেছে, সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। সেখানেও তারা ব্যবসা করেছে। এই সরকারের দেশের মানুষের মায়া-মমতা নাই। কেন তাদের ক্ষমতায় রাখবেন। 

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। সাংবাদিকরা লিখতে পারেন না। এই নারকীয় অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে। যদি আমরা সরকারকে পদত্যাগ করাতে পারি তখনই এদেশের মানুষ কথা বলতে পারবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আমাদের ৫০০ জন লোককে গুম করেছে। কোনো লাভ হয় নাই। তাদের পরিবারের সবাই বিএনপি করে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, জনগণের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করলে সরকারের কোনো লজ্জা নেই। অবিলম্বের সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।

মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, নবীউল্লাহ নবী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।