বরিশাল থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত বিএনপির রোডমার্চ

লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করুন, সরকারকে নজরুল

লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করুন, সরকারকে নজরুল

সরকার পতনের একদফা দাবিতে উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের পর এবার বরিশাল বিভাগে রোডমার্চ করেছে বিএনপি। গতকাল সকালে বরিশাল শহরের বেলপার্ক থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের মাধ্যমে রোডমার্চ শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘপথে ঝালকাঠিতে দুটি পথসভার পর বিকালে পিরোজপুরে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব পথসভা ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু এই ভোট চোর সরকার দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবারো ভোট চুরি করতে চায়। কিন্তু আমরা আর ভোট চুরি করতে দেবো না। রাজপথেই প্রতিরোধ করা হবে। আর এই সরকারকে জনগণ আর দেখতে চায় না। সুতরাং লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করুন।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকে আমরা অনির্বাচিত, অবৈধ, অত্যাচারী, মামলাবাজ এবং হামলাবাজ এক সরকারের অধীনে আছি। এই সরকারের অবসান আমাদের একমাত্র দাবি। কারণ আমাদের আর যে দাবিগুলো আছে, যদি এই সরকার থাকে তাহলে একটা দাবিও পূরণ হবে না। সুতরাং দাবি এখন একটাই, এই সরকারের পতন। তিনি বলেন, এই সংসদ অবৈধ। রাতের ভোটে সংসদ নির্বাচিত হয়েছে। এই সংসদ বাতিল করতে হবে, এই সরকারের পদত্যাগ করতে হবে এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সত্যিকার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা করার একটাই কাজ, সেটা হলো- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই  একদফা দাবি নিয়ে আমরা লড়াইয়ের ময়দানে আছি। 

নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাবো না। এই ফাজলামি আর সহ্য করা হবে না। আমাদের একদফা দাবি আদায় করে এই সরকারের পরিবর্তন করে দেশে গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবো। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মানেনি আওয়ামী লীগ। তখন তারা বলেছিল- ২৬ বছর আগে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাই তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। যদি ২৬ বছর আগে বিএনপি করার কারণে কেএম হাসানের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তাহলে এখন যিনি প্রধানমন্ত্রী তার অধীনে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তাহলে কেন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবো আমরা। আওয়ামী লীগের স্বভাব হলো- তারা নিজে যা করে সেটা সঠিক, কিন্তু একই কাজ অন্য কেউ করলে সেটা সঠিক নয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। কিন্তু শহীদ জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ৮২ সালে ফের গণতন্ত্র হত্যা করে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল এরশাদ। বর্তমান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলন করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। আর বারবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে বিএনপি। মুমূর্ষু গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবো আমরা।   

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন তিনি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, এই সরকার ভোট চোর সরকার। এই চোরদের আর সময় দেয়া যাবে না। এদের হটানোর জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আসুন, ডু অর ডাই। আর কোনো নির্বাচন অবৈধভাবে হতে দেবো না। 

শিয়ালকাঠী কাউখালীতে রোডমার্চ সমাপনী সমাবেশে  সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

এর আগে সকাল সোয়া ১১টায় বরিশাল বেলস পার্কে উদ্বোধনী সমাবেশের  পর রোডমার্চ শুরু হয়। ভোলা, বরগুনা এবং পটুয়াখালীর বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বরিশালে এসে রোডমার্চে যোগ দেন। উদ্বোধনী সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এই সরকারের পতন চাই। সংসদ বাতিল করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। সেই দাবিতে সারা দেশের মানুষ রোডমার্চ ও সভা করছে। তারই অংশ হিসেবে বরিশালের জনতা আজ রোডমার্চ করছে। এই রোডমার্চ জনগণকে সম্পৃক্ত রাখার মতো একটি কাজ। আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে এই রোডমার্চ আমরা করছি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। একটা ডিমের দাম ১৬ টাকা! সমস্ত জিনিসের দাম বেশি। গরিব মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নির্দিষ্ট উপার্জনের মানুষ হালাল উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। এসব অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। শিশু ও নারীদের পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। এই অবস্থা থেকে দেশ এবং দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে এবং মুক্ত করতে হবে।

কর্মসূচি উপলক্ষে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ছাড়াও কয়েক শত মোটরসাইকেল নিয়ে যোগ দেন। মাথায় ব্যান্ড ও ক্যাপ পড়ে, রং-বেরংয়ের গেঞ্জি গায়ে এবং হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে হাজারো নেতাকর্মী এ সময়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময়ে তুমুল বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে পথে পথে বিভিন্ন এলাকার নেতারা ছাড়াও বিগত নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থী, মনোনয়ন প্রত্যাশী, কেন্দ্রীয় নেতাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতার উপচেপড়া ভিড় আর উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে রোডমার্চ বরিশাল, ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুরে  পৌঁছে।

পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে বিপুলসংখ্যক গাড়িবহর নিয়ে রোডমার্চ শুরুর পরে পথে পথে প্রত্যেক জেলার বিভিন্ন থানা-উপজেলার আরও নেতাকর্মীরা এতে যোগ দেন। একসময়ে রোডমার্চে গাড়িবহর আর নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। দুপুর ২টায় ঝালকাঠি বাসস্ট্যান্ড রোড পেট্রোল পাম্পের সামনে প্রথম পথসভা হয়।

বিকালে ৩টায় ঝালকাঠি রাজাপুরে দ্বিতীয় সভায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আছে। আমরা আগামীতে পাহারা দিতে পারি নাই। এবার সারা দেশে আর আমরা চুরি করতে দিবো না। এবার আমার যে অধিকার, আমার ক্ষমতা, আমার যে প্রাপ্য, সেটা আমরা আদায় করে ছাড়বো। সেটা হলো, আমার ভোট আমি দিবো যাকে খুশি তাকে দিবো।