মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় বাধা: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় বাধা: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রথম বাধা বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বার্গেনার। একিসঙ্গে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় এবং আত্মমর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘ তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে উল্লেখ করেন বিশেষ এই দূত।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের উপর জাতিসংঘের এক বিশেষ ব্রিফিংএ জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারীর করা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বার্গেনার।

বিশেষ এই ব্রিফিং এ ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুশফিক বলেন, "আমার সহকর্মী ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশ্ন করেছেন। আমি এ প্রসঙ্গে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাই। রোহিঙ্গাদের কীভাবে তাদের আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়? বাংলাদেশ এমনিতেই অনেক সমস্যার মুখামুখি। রয়েছে অব্যাহত মানবাধিকারের লংঘন।

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। তারা কত সময় ধরে বাংলাদেশে থাকবে? আপনি জানেন যে ৯০’র দশক থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। সংখ্যাটি এখন ১০ লাখেরও বেশি। ১৯৯৩ সালের দিকে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যায়। এখন সংখ্যা ১০ লাখ। পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারন করেছে। এবিষয়ে আপনি কী মতামত দিবেন? তাদেরকে আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর ব্যাপক ভিত্তিক আর কেমন ভূমিকা রাখা উচিত? পুরো বিষয়টিতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরার বিষয়টি জড়িত।"

জবাবে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বার্গেনার বলেন, "মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সবচেয়ে বড় বাধা। সামরিক ক্যু সংগঠিত হবার কারণে প্রক্রিয়াটি জটিল আঁকার ধারণ করেছে।"

৩ বছর আগে প্রত্যাবাসন অনেকদূর অগ্রসর হয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই সমস্যার সমাধান করতে হলে মিয়ামারের সামরিক জান্তা সরকারের অবসান হতে হবে। এটা ব্যতিরেকে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলে মত দেন জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত।"

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বার্গেনার বলেন, "যদি সত্য কথা বলতে হয় তাহলে প্রথমে যেটা বলব সেটা হল- মিয়ানমারে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক জান্তা। এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে রাখাইনে সবপক্ষের একটি অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবেনা। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের ৩ বছর পূর্বে আমরা সেখানে সকলরকমের সহযোগিতা পেয়েছি। রাখাইনে একটি ভালো পরিবেশ তৈরিতে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন এবং মিয়ানমার আমাদের কার্যক্রমে সহায়তা করেছে। সেখানকার পরিবেশ কীভাবে ভালো করা যায়, কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি।"

গৃহিত পদক্ষেপগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরে মিয়ানমারে জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত বলেন, "রাখাইনে স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ইউএনএইচসিআর এবং ইউএনডিপি-এর সমন্বয়ে করা চুক্তির সম্প্রসারণ করেছি, ইউএনএইচসিআর প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করার উদ্যেগ নেয়া হয়। আমার অনুরোধের প্রেক্ষিতে মোবাইল ব্যবহার পুনরায় চালু এবং বার্থ সার্টিফিকেট ব্যবস্থার সুবিধা দেয়া হয় সেখানে।"

তিনি জানান, "আমার অনুরোধের প্রেক্ষিতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে মিয়ানমার সরকার। এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। আর এ বিষয়টিকে ২০২১ সালের জন্য পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গুরুত্ব দেয় মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন শুরুর মুহূর্তে তা পর্যবেক্ষণে আমি আসিয়ানকে যুক্ত হতে বলেছি। যদি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সমর্থন দিতে তাদের আহবান জানাই।"

মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বলেন, "মিয়ানমার-বাংলাদেশ দুপক্ষই কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সম্মতি প্রদান করে। বিষয়টি নিয়ে আমি মাসের পর মাস পরিশ্রম করেছি। আমি খুশি যে তারা আমার প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করে নেয়।"

তিনি বলেন, "মিয়ানমার দেশের অভ্যন্তরে ৮০০ রোহিঙ্গাকে অবৈধ নাগরিক হিসেবে আটক করে এবং পরে সবার চাপের মুখে তাদের মুক্তি দেয়। আমরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে কাজ করেছি। আমরা এনবিসি এবং হাউজ হোল্ডিং রেজিস্ট্রেশনকে রােহিঙ্গাদের নিবন্ধন করতে প্রস্তাব দিয়েছি। একিসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে আহবান জানিয়েছি তারা যেন এই প্রজেক্টে কোন অনিয়ম না করে।"

ক্রিস্টিন জানান, "সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল- মাঠপর্যায়ে যেসকল এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে তাদেরকে দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারনা পরিবর্তন আনতে আমরা সহায়তা দিয়েছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাদের কার্যক্রমকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।"

সেনা অভ্যুত্থান শর্তেও জাতিসংঘ এসকল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ক্রিস্টিন বলেন, "গত শনিবারও রাখাইনে ১০০০ লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। আর এ কার্যক্রম চালু থাকবে।"

কেবি/