দুর্দান্ত জয়ে সেমির পথে আরেক ধাপ এগোলো পাকিস্তান

দুর্দান্ত জয়ে সেমির পথে আরেক ধাপ এগোলো পাকিস্তান

টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে আফগানিস্তানের দেয়া ২২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য পাড়ি দেয় পাকিস্তান। দলের হয়ে অপরাজিত (৪৯) রান করেন ম্যাচ জয়ের নায়ক ইমাদ ওয়াসিম।

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি গড়ায় শেষ ওভার পর্যন্ত। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ৭ রান। বল হাতে আসেন পেসার গুলবাদিন নায়েব। প্রথম বলে স্ট্রাইকে থাকা ইমাদ ১ রান নিয়ে প্রন্ত বদল করেন। দ্বিতীয় বল থেকে ওয়াহাব রিয়াজ ১ রান নিয়ে ফের ইমাদকে স্ট্রাইক দেন। তৃতীয় বলে ২ রান নিলে ইমাদ, শেষ তিন বলে ৩ রান লাগে পাকিস্তানের। কিন্তু চতুর্থ বলে ইমাদ চার হাঁকিয়ে ম্যাচে দারুণ ফিনিশিং দিয়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকটে হারিয়ে ২২৭ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। দলের হয়ে আসগর আফগান ও নাজিবউ্ল্লাহ জাদরান দুজনের ব্যাট থেকে আসে (৪২) রান করে।

সেমিফাইনালের পথ জীবিত রাখতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই পাকিস্তানের্। অন্য দিকে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত আফগানদের কাছে জয় হয়ে আছে সোনার হরিণ। সেই সোনার হরিণ ধরতে চায় তারাও। এমন সমীকরণে লিডসের হেডিংলিতে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব।

ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি আফগানদের। দেখে শুনে খেলে ওপেনিং জুটিতে রহমত শাহ ও গুলবাদিন নায়েব মিলে তোলেন ২৭ রান। কিন্তু ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই বাজিমাত করেন পাকস্তানী পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পর পর দুই উইকেট নিয়ে আফগানদের ফেলেন চাপে, দলকে এনে দেন শুরুতেই দারুণ ব্রেক থ্রো। দলীয় ২৭ রানের মাথায় গুলবাদিন ১৫ ও হাশমতউল্লাহ শাহেদী শূন্য রানে ফিরে গেলে বিপর্যয়ে পড়ে আফগানিস্তান। আরেক ওপেনার রহমত শাহ চারে ব্যাট করতে নামা ইকরাম আলি খিলকে নিয়ে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করলেও দলীয় ৫৭ রানের মাথায় রহমত আউট হলে ফের চাপের খাদেই থেকে যায় আফগানরা। রহমত ৩৫ রান করে ইমাদ ওয়াসিমের বলে বাবার আজমের তালুবন্দী হয়ে পিচ ছাড়েন। চতুর্থ উইকেটে আসগর আফগান ও ইকরাম আলি দলকে থাদ থেকে তোলার চেষ্টা করেন। আসগর ছিলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক, অন্য দিকে ইকরাম আলি ছিলেন অনেকটা ধীর গতিতে। চতুর্থ উইকেট দুজনে তোলেন ৬৪ রান। প্রথম সারির চার ব্যাটম্যানকে হারালোও রানের গতি ছিলো সাবলীল। ১৮ ওভারেই উঠে ১০০ রান। ইনিংসের ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আসগর আফগানকে বোল্ড করে পাকিস্তানকে ম্যাচে লেগ স্পিনার ফেরান শাদাব খান। ৩৫ বলে ৩ চার ও দুই ছক্কায় ৪২ রান করেন আসগর । ১২১ রানের মাথায় তার আউটের পর ১২৫ রানের হারায় ইকরাম আলির উইকেটও। ৬৬ বলে ২৪ রান করে ইমাদের বলে মোহাম্মদ হাফিজের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ইকরাম খিল। ১৬ রান করে মোহাম্মদ নবী আউট হন ওয়াহাব রিয়াজের শিকার হয়ে। সপ্তম উইকেটে আসে ২৯ রান। সাতে ব্যাট করতে নামা নাজিবউল্লাহি জাদরানের ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান। যার সুবাধে দুই শ’ রান পাড়ি দিতে পারে আফগানিস্তান। ২০২ রানের মাথায় তার আউটের পর ব্যাট করতে নেমে ৮ রান করে ২১০ রানের মাথায় শাহীন আফ্রিদির চতুর্থ শিকার হন রশিদ খান। ১ রান করে ওয়াহাবের বলে হামিদ হাসান বোল্ড হয়ে ২১৯ রানের মাথায় নবম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত সানাউল্লাহ সিনওয়ারির অপরাজিত ১৯ ও মুজিবুর রহমানের ৭ রানের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান করে সংগ্রহ করে আফগানরা।

পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে শাহীন শাহ আফ্রিদি ৪টি, ইমাদ ওয়াসিম ও ওয়াহাব রিয়াজ ২টি, শাদাব খান একটি উইকেট শিকার করেন।

২২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আফগান স্পিনার মুজিবুর রহমানের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে দলের রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন ওপেনার ফখর জামান। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের পঞ্ম বলে বাবর আজমের বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলে পাকিস্তান। প্রথম উইকেট হারিয়ে আরেক ওপেনার ইমাম উল হককে নিয়ে দেখে-শুনে খেলে ১০.১ ওভারে দলে ফিফটি পূর্ণ করেন তারা। ইনিংসের ১৬তম ওভারের পঞ্ম বলে ইমামকে স্ট্যাম্পিং করে ৭২ রানের জুটি ভেঙে দলকে ব্রেক থ্রো এনে দেন আফগান অপ স্পিনার মোহাম্মদ নবী। ৫১ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন ইমাম। তার আউটের পর ৪৫ রান করে দলীয় ৮১ রানের মাথায় নবীর বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বাবর আজম। চারে ব্যাট করতে নামা মোহাম্মদ হাফিজ ও পাঁচে নামা হারিস সোহেল দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করলেও দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে ৪০ রানের জুটি ভেঙে দলকে ম্যাচে ফেরান মুজিব। ১৯ রান করে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে হাশমতউল্লাহ শাহেদীর তালুবন্দী হয়ে ফেরেন হাফিজ। ছয়ে ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক সরফারজ আহমেদ। হারিসকে নিয়ে কাপ্তান দলকে এগিয়ে যেতে চাইলেও ৩৫তম ওভারের শেষ বলে রশিদের গুগলিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ২৭ রান করে ফেরেন হারিস সোহেল। ১৪২ রানে প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে কঠিন বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান । ১৫৬ রানের মাথায় ১৮ রান করে সারফরাজ রান আউট হলে আফগানিস্তানের দিকে ম্যাচ হেলে যায়। কিন্তু পাকিস্তান বলে কথা। অসম্ভবকে সম্ভব করাই যাদের নিয়মিত অভ্যাস। সপ্তম উইকেট জুটিতে ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান পঞ্চাশ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান দুজনে।ইনিংসের ৪৬তম ওভারে ১৮ রান দিয়ে পেসার গুলবাদিন নায়েব ম্যাচ অনেকটা ফসকে দেন পাকিস্তানের দিকে। ৪৬ ওভারের চতুর্থ বলে ১১ রান করে শাদাব খান রান-আউটের শিকার হয়ে ফিরলে তখন পাকিস্তানের প্রয়োজন ২৩ রান। নয়ে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই রশিদকে চার হাঁকিয়ে ম্যাচকে আরো ক্লোজ করে দেন। কিন্তু এভাবেই খেলা শেষ পর্যন্ত ফলাফল পেতে গড়ায় শেষ ওভার পর্যন্ত। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ৭ রান। বল হাতে আসেন পেসার গুলবাদিন নায়েব। প্রথম বলে স্ট্রাইকে থাকা ইমাদ ১ রান নিয়ে প্রন্ত বদল করেন। দ্বিতীয় বল থেকে ওয়াহাব রিয়াজ ১ রান নিয়ে ফের ইমাদকে স্ট্রাইক দেন। তৃতীয় বলে ২ রান নিলে ইমাদ, শেষ তিন বলে ৩ রান লাগে পাকিস্তানের। কিন্তু চতুর্থ বলে ইমাদ চার হাঁকিয়ে ম্যাচে দারুণ ফিনিশিং দিয়ে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন। শেষ পর্যন্ত ইমাদ ওয়াসিম ৫৪ বলে ৫ চারে করেন অপারিজত ৪৯ রান। ওয়াহাব রিয়াজ করেন এক ছক্কা ও এক চারে ৯ বলে ১৫ রান। আর পাকিস্তান পায় এক অসাধারণ জয়।

আফগান বোলারদের মধ্যে মুজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ নবী ২টি এবং রশিদ খান একটি উইকেট শিকার করেন।

বল হাতে দুই উইকেট এবং ব্যাট হাতে ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন পাকিস্তানী অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম।

এমজে/