হঠাৎ ঝড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ

হঠাৎ ঝড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ

প্রথম সেশনে দুটি উইকেটের পতন। প্রতিরোধ গড়ে দ্বিতীয় সেশনটা দুর্দান্ত কাটালেন লিটন ও মিরাজ। কিন্তু তৃতীয় সেশনের শুরুতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার। মাত্র ২৪ রানের ব্যবধানে নেই বাকি চার উইকেট। বাংলাদেশ ছুঁতে পারলো না ৩০০ রানও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে অল আউট হয়েছে মুমিনুল শিবির। ১১৩ রানে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবীয়রা করেছিল ৪০৯ রান।

শনিবার দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ২৭২ রান। ক্রিজে ছিলেন লিটন ও মিরাজ। লিটনের সামনে উঁকি দিচ্ছিল প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ। এগুতে পারতেন মিরাজও। কিন্তু শেষ সেশনের তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত কর্নওয়ালের। বিদায় নেন লিটন ও নাঈম। পরের দুটি উইকেট নেন গ্যাব্রিয়েল ও জোসেফ। শেষ হয় বাংলাদেশের পথচলা।

শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশ তোলে ৪ উইকেটে ১০৫ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর ও মোহাম্মদ মিঠুন নামেন তৃতীয় দিনের ব্যাট করতে।

শনিবার সকালের সেশনেই এই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন মিঠুন। আর মুশফিকুর তো রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন শর্ট কভারে। এমন শটে বল চলে যায় কভারে, তা ক্রিকেট বিশ্ব কমই দেখেছে। মুশফিকের সৌজন্যে তা দেখা গেল।

দলীয় ১৪২ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন। সারাক্ষণ ভালো খেলে ক্ষণিকের অমনোযোগিতায় বিদায় নেন লিটন কর্নওয়ালের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। ৮৬ বলে ১৫ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-মিঠুনের জুটি ছিল ১৮১ বলে ৭১ রানের।

২৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিক ফিফটি স্পর্শ করেন ৮৯ বলে। এক মুহূর্তের জন্যও অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায়নি তাকে। কিন্তু হঠাৎই যেন মাথায় চেপে বসে ভূত। কর্নওয়ালের নিরীহ এক বলে রিভার্স সুইপ করতে ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কাভারে। সেখানে ক্যাচ মুঠোবন্দী করেন মায়ার্স। ১০৫ বলে ৫৪ রান করে ফেরেন মুশফিক। টেস্ট ক্যারিয়ারে মুশফিক পান ২২তম ফিফটি।

এরপর দলের যেটা প্রয়োজন ছিল, সেটাই করে যাচ্ছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী মিরাজ। দুজনের নিরবিচ্ছিন্ন জুটি লাঞ্চ অবধিই নয়, কাটিয়ে দেন দ্বিতীয় সেশন চা বিরতি পর্যন্তও। দুজনের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে স্বাগতিক শিবির পাচ্ছিল ভরসা। তার আগে দুজনই পান ফিফটির দেখা। যা টেস্ট ক্যারিয়ারে লিটনের সপ্তম, মিরাজের তৃতীয়। ৯২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন লিটন। মিরাজ অবশ্য আরও সময় নিয়েছেন। তার ফিফটি ১১২ বলে।

তৃতীয় সেশনে ধৈর্যচ্যুতি বাংলাদেশের। কর্নওয়ালের নিরীহ বলে স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন। ১৩৩ বলে ৭১ রান করে ফেরেন তিনি। লিটন হাঁকান ৭টি চার। সেইসাথে ভাঙে সপ্তম উইকেটে ১২৬ রানের সবচেয়ে বড় জুটি, ২৫৫ বল। একই ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে ক্যাচ দেন রানের খাতা খুলতে না পারা নাঈম।

২৮১ রানে নেই আট উইকেট। শঙ্কা তখন চরমে, ৩০০ করতে পারবে তো বাংলাদেশ। ভরসা ছিল মিরাজের উপর। কিন্তু তিনিও হতাশ করলেন। পেসার গ্যাব্রিয়েলের বলে আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন ব্র্যাথওয়েটের হাতে। ১৪০ বলে ৫৭ রান করে ফেরেন তিনি। মিরাজের ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার।

অথচ তাইজুলকে নিয়ে বড় জুটিই গড়তে পারতেন তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে জোসেফের বলে আউট হন আবু জায়েদ রাহী। ১০ বলে ১ রান তার। ১৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম।

প্রথম টেস্টে বল হাতে কারিকুরি খুব একটা দেখাতে না পারলেও ঢাকাতে চমক দেখান ওয়েস্ট ইন্ডিজের দীর্ঘদেহীর স্পিনার কর্নওয়াল। তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো। এছাড়া গ্যাব্রিয়েল তিনটি, জোসেফ নেন দুটি করে উইকেট।

এমজে/