ইরানে হামলার পরিকল্পনা ট্রাম্পের, উপদেষ্টাদের পরামর্শে সরে আসলেন

ইরানে হামলার পরিকল্পনা ট্রাম্পের, উপদেষ্টাদের পরামর্শে সরে আসলেন

নিয়ম অনুযায়ী আর মোটামুটি দু’মাস ক্ষমতায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই নাটকীয় সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন তিনি। তাকে নিবৃত করেন উপদেষ্টারা।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকে তিনি ইরানে ওই হামলা চালানোর অনুরোধ করেন। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এতে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি।

৩রা নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান তিনি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করে নেননি। তা সত্ত্বেও আইন বলে আগামী ২০ শে জানুয়ারি নির্বাচিত নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু তিনি কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন।

এমন অবস্থায় তিনি ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ওই সরকারি কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্টা ট্রাম্প ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা জানানোর পর উপদেষ্টারা তাকে এ থেকে বিরত রাখেন।

তারা তাকে বোঝান যে, এতে বৃহত্তর একটি যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। সরকারি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানে হামলা চালানোর জন্য অপশন খুঁজছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন উপদেষ্টারা। এর ফলে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তারপর কেটে যাচ্ছে চার বছর। এর পুরোটা সময়ই তিনি ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী নীতি অবলম্বন করেছেন। প্রথমে ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহার করেন ২০১৮ সালে। পক্ষান্তরে ইরানের ওপর আরোপ করেন অর্থনৈতিক অবরোধ। এতে ইরানের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়ে।

এরপর সুয়েজ প্রণালীতে ড্রোন হামলা-পাল্টা হামলা হয়। ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে ইরাকে হত্যা করা হয়। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে বিমান বন্দরে ড্রোন হামলা করে কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এসব নিয়ে ইরানের সঙ্গে বার বার যুদ্ধ বেধে যায়-যায় অবস্থা। কিন্তু সর্বশেষ তিনি ইরানের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার একটি রিপোর্টের একদিন পরেই।

ওই রিপোর্টে বলা হয়, ইরান তার ভূ-উপরস্থ প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক সেন্ট্রিফিউজ তৈরি করেছে এবং তা একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্থাপনায় সরিয়ে নিচ্ছে। ২০১৫ সালে বড় বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তির লঙ্ঘন এটা।

উল্লেখ্য, ইরানকে কম মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের জন্য সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল ২০২.৮ কেজি। কিন্তু এখন তারা এই ইউরেনিয়াম ২.৪ টন মজুদ করেছে। বছরের এক কোয়ার্টারে তারা উৎপাদন করেছে ৩৩৭.৫ কেজি ইউরেনিয়াম। জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ’র তথ্য মতে, আগের দুই কোয়ার্টারে তারা উৎপাদন করেছে ৫০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম।

এখানে উল্লেখ্য, যদি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখন ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা নাতাঞ্জে সামরিক হামলা চালান তাহলে তা আঞ্চলিক এক যুদ্ধে রূপ নেবে। আর এর বড় দায়িত্ব অনাকাঙ্খিতভাবে গিয়ে পড়বে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের কাঁধে। এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্রিফিং করেনি বাইডেনকে। ফলে তার অন্তর্বর্তী টিম ট্রাম্পের ইরান হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।