চীনের সর্বশেষ সম্রাটের ঘড়ি বিক্রি হলো ৬.২ মিলিয়ন ডলারে

চীনের সর্বশেষ সম্রাটের ঘড়ি বিক্রি হলো ৬.২ মিলিয়ন ডলারে

চীনের শেষ সম্রাট আইসিন-জিওরো পুইয়ের মালিকানাধীন একটি হাতঘড়ি ৬.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে। হংকংয়ের একটি নিলাম কেন্দ্রে ঘড়িটি বিক্রি হয়। মূলত বিলাসবহুল ঘড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি পাটেক ফিলিপের এই ঘড়ির মডেলটি অত্যন্ত বিরল হওয়ায় এই ঘড়ির দাম এত বেশি বলে জানিয়েছে সিএনএন। এক রিপোর্টে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বিশ্বে এই মডেলের মাত্র আটটি ঘড়ি রয়েছে।

ফিলিপস নিলাম হাউস জানিয়েছে, এই ঘড়িটির যা ইতিহাস রয়েছে তাতে এর দাম আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। ৮৬ বছর বয়সী এই ঘড়িটি পাঁচ বছর সাইবেরিয়াতেও ছিল। চীনের সাবেক এই শাসক সোভিয়েত ইউনিয়নের ওই অঞ্চলে পাঁচ বছর ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা যখন হেরে যাচ্ছিল তখন পালানোর চেষ্টা করেন পুই। তবে তাকে একটি বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা তাকে সাইবেরিয়ার একটি শহরে নিয়ে যায় এবং তার উন্নত জীবন নিশ্চিত করে। সোভিয়েত ইউনিয়নে তিনি প্রায় পাঁচ বছর বাস করেছেন।

এরপর ১৯৫০ সালের দিকে তাকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়। ওই সময় এ ঘড়িটিই পরতেন পুই।

এই ঘড়িটি ১.২ ইঞ্চি ব্যাসের এবং এটি তৈরিতে প্ল্যাটিনাম ব্যবহার করা হয়েছে। এর ডায়ালগুলো লেখা হয়েছে আরবি সংখ্যায়। এছাড়া এই ঘড়ি দিয়ে পৃথিবীর অবস্থান অনুযায়ী চাঁদের অবস্থান জানা যেতো। পুই কীভাবে এই ঘড়িটি কিনেছিলেন বা পেয়েছিলেন তা জানা যায়নি। যদিও রেকর্ডগুলি দেখায় যে এটি প্রাথমিকভাবে প্যারিসের একটি বিলাসবহুল দোকান থেকে বিক্রি হয়েছিল। ফিলিপস হাউস জানিয়েছে যে, চীনের এই সম্রাট সোভিয়েত ইউনিয়নে এই ঘড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তার অনুবাদক হিসাবে কাজ করা জর্জি পারমিয়াকভকে এই ঘড়িটি উপহার দিয়ে আসেন।

পুইয়ের জীবনের ওপর ভিত্তি করে ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করা হয় অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট এম্পারর’। তিনি ১৯০৮ সালে শিশু বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে যদিও বিদ্রোহের মাধ্যমে তাকে উৎখাত করা হয়। তবে তিনি তখনও বেইজিং এর রাজপ্রাসাদে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন। ১৯১৭ সালে সংক্ষিপ্তভাবে সম্রাট হিসাবে পুনর্বহাল করা হয় তাকে।

১৯২৪ সালে তিনি বেইজিং থেকে পালিয়ে যান এবং জাপানের সাথে একটি জোট গঠন করেন। পরবর্তীতে তাকে উত্তর-পূর্ব চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলের মানচুকুও-এর পুতুল সম্রাট করে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর, পুইকে সোভিয়েত বাহিনীর হাতে বন্দী করা হয় এবং যুদ্ধবন্দী হিসেবে রাখা হয়। ফিলিপসের মতে, সম্রাট পুই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে চীনে ফেরার আগে ১৯৫০ সালে পার্মিয়াকভকে ঘড়িটি উপহার দিয়েছিলেন।