সাত রাষ্ট্রদূত নিয়ে আবারো ক্ষোভ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

‘এ দেশে রাজনীতি করবেন? নাকি অন্য কোনো কিছু?’

‘এ দেশে রাজনীতি করবেন? নাকি অন্য কোনো কিছু?’

মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত সাত দেশের রাষ্ট্রদূতেরা যে বিবৃতি দিয়েছেন তা নিয়ে আবারো অসন্তোষ আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। শুক্রবার দেয়া একদফা প্রতিক্রিয়া শেষ না হতেই আজ আবারো ভিডিও বার্তায় দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকি কূটনীতিকরা দেশে রাজনীতির মহড়া শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি রাষ্ট্রদূতদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন।

শনিবার গণমাধ্যমে সাতটি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতদের টুইট নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ প্রতিক্রিয়া জানান। মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে সম্প্রতি ঢাকায় সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূত আলাদা আলাদা টুইট করেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘পৃথিবীতে কোনো দেশে রাষ্ট্রদূতদের জটলা করে এমনভাবে বিবৃতি দিতে দেখিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খুব খুশি হতাম এই রাষ্ট্র্রদূতেরা যদি জটলা করে বলতেন, রাখাইনে যুদ্ধ হচ্ছে, এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা (রাষ্ট্রদূতদের টুইটে দেওয়া অভিমত) কোনো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। তাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তা প্রটোকল অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তারা রাজনীতির মহড়ায় চলে গেছেন। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। তারা কি এ দেশে রাজনীতি করবেন? এ দেশে নির্বাচন করবেন? নাকি অন্য কোনো কিছু?

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এসব মতলব সুবিধার না। আমি আশা করব, তারা তাদের প্রটোকল মানবেন এবং তারা সেভাবেই কাজ করবেন। তারা জ্ঞানীগুণী জন। তাদের এ ধরনের ব্যাপার প্রত্যাশিত নয়।’

সাত রাষ্ট্রদূতের টুইটে কি ছিলো

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূত নিজেদের টুইটে করোনাভাইরাসের মতো মহামারির সংক্রমণের সময় নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রচার নিশ্চিত করার স্বার্থে গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের ওপর গুরুত্ব দেন। তাদের মতে, সংকটকালে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে জনগণের জন্য অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাটা জরুরি।

ওই দিন মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোটা স্লাইটার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লিকেন, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি পেটারসন ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েজ আলাদা আলাদা টুইট করেন।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার তার টুইটে লেখেন- সব জায়গায় জনস্বার্থ সুরক্ষায় অবাধ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য প্রচারের সুযোগ থাকা দরকার। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা যেমন জরুরি, তেমনি গণমাধ্যম কর্মীর কণ্ঠও যেন রোধ করা না হয়।

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন টুইটে লেখেন- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখাটা এখন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে, সেই সঙ্গে গণমাধ্যমও যেন তার দায়িত্বটা পালন করতে পারে। ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে তেরিঙ্ক তার টুইটে লেখেন- সংকটের সময়ে এসে গণমাধ্যমের ভূমিকা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

জনগণের নির্ভরযোগ্য ও বাস্তবভিত্তিক তথ্য পাওয়ার সুযোগ পাওয়া প্রয়োজন। গুজব যখন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, সে সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের অবাধে ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত। করোনাভাইরাস সংকটের সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়ার কথা উঠে আসে বাকি চার কূটনীতিকের টুইটেও।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয় বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস জি ওয়েলস টুইটে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) নতুন করে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

সরকার মানবাধিকারকর্মী, কার্টুনিস্ট, ব্যবসায়ীসহ চারজনকে আটক করে। বুধবার সরকার তাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতেরা টুইটে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নতুন করে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে।

জিএস/