বিশ্বব্যাংকের ব্লগপোস্ট

চাহিদা কমে যাওয়ায় কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গার্মেন্টে কর্মরত বাংলাদেশি গরিব নারীরা

চাহিদা কমে যাওয়ায় কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গার্মেন্টে কর্মরত বাংলাদেশি গরিব নারীরা

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি কমে গেছে শতকরা ৮.৭ ভাগ। ১৯৯২ সালের পরে এটাই সবচেয়ে বড় পতন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে খুচরা বিক্রেতাদের স্টোরগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই পোশাক প্রস্তুতকারক শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিক্রিতে লোকসানের বিষয়টি বুঝতে পেরে বায়াররা অর্ডার বাতিল করছেন। এর ফলে গার্মেন্ট কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন বন্ধ করে রেখেছে।

গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন যুবতী নারী ও শ্রমিকরা। তাদের দক্ষতা ও শিক্ষা সীমাবদ্ধ।
তাদের কাজকে একটি নিয়মিত চাকরি হিসেবে গণ্য করার সুযোগ এনে দিয়েছে এই খাত। কিন্তু এখন উদ্বেগের বিষয় হলো, চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে তৈারি পোশাক রপ্তানি কমে আসায় এই খাতে একটি ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উচ্চ মাত্রায় তৈরি পোশাক খাতকে কেন্দ্র করে। ফলে অন্য বিভিন্ন রকম রপ্তানির চেয়ে অর্থনীতিতে এর ক্ষতিকর প্রভাব দ্রুত বেশি পড়তে পারে। দেশের মোট রপ্তানির শতকরা ৮৯ ভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

২০১৭ সালের জব ডায়াগনস্টিকের মতে, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে নেট কর্মসংস্থান যা সৃষ্টি হয়েছে, তার চারভাগের এক ভাগেরও বেশি এই শিল্পে হয়েছে। শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মধ্যে তৈরি পোশাক খাতই হলো প্রধান চালক। বিশেষ করে তা ২০১০ সালে লক্ষ্যণীয়।

আমাদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে বৈশ্বিক চাহিদার এই পরিবর্তন কিভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে প্রভাবিত করবে, যা থেকে আক্রান্ত হবে এসব শ্রমিকের মজুরি ও তাদের চাহিদাও কমে যাবে। আমরা দেখেছি, উচ্চ হারে রপ্তানির ফলে বেতন বৃদ্ধি হয়। বেশি মানুষ অনানুষ্ঠানিক কাজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে লিপ্ত হয় এই বৃহৎ রপ্তানি খাতে। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বর্ধিত বেতন ও আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করার সুবিধা পান অধিক পরিমাণ মানুষ। তাতে তাদের অর্থনৈতিক সুবিধা আসে। আমাদের ফলাফল নারীদের বৃহত্তর রপ্তানিতে গুরুত্ব তুলে ধরে।

আমরা পর্যবক্ষেণ করেছি যে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে নারীরা অনানুষ্ঠানিক শ্রম থেকে বেরিয়ে এসে এই খাতে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পান। বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেয়েছি যে, অন্য যেকোন শিল্পের চেয়ে গার্মেন্টে উচ্চ হারে নারীদের নিয়োগ করা হয়। তবে বৃহৎ গার্মেন্ট রপ্তানির ফলে পুরুষ ও নারীর বেতনের মধ্যে পার্থক্য কমে আসে। এটা শুধু গার্মেন্ট কারখানায় নয়। দীর্ঘমেয়াদে পুরো অর্থনীতিতে এই অবস্থা।

এই গবেষণা রিপোর্টে এটা পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের মতো দেশের রপ্তানি সুবিধা। এই গবেষণায় বাণিজ্যের উত্থান ও পতনের সময়টাকে কভার করা হয়েছে। এতে প্রায় প্রতিসম ফল দেখা যায়। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দরিদ্র শ্রমিকরা অধিকতর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এর ফলে নারীদেরকে হয়তো শ্রম থেকে বের করে আনবে অথবা অনানুষ্ঠানিক কাজে ফিরিয়ে নেবে। আর তাতে নাটকীয়ভাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে বেতন পার্থক্য বৃদ্ধি পাবে। তৈরি পোশাকখাতে যখন চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল তখন যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল, এর ফলে তা উল্টে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর মতে, উন্নয়নে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো লিঙ্গগত বেতন কাঠামোতে পার্থক্য কমিয়ে আনা। বিশেষ করে লিঙ্গগত বেতন পার্থক্য যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শতকরা ২৫ ভাগ কমিয়ে আনা যায়, তাহলে বৈশ্বিক জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

এইচঅ্যান্ডএমের মতো বৈশ্বিক ক্রেতারা বর্তমান অর্ডারগুলোর মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হয়েছে। তবে মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সার, কিয়াবি এবং টার্গেটের মতো কোম্পানিগুলো নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, যেসব পোশাক এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে অথবা উৎপাদনে রয়েছে, তা তারা নেবে। শীর্ষস্থানীয় এসব বায়ারদের এমন উদ্যোগ তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা সমাধানে অত্যন্ত সহায়ক হবে।

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ওপর এই মহামারির প্রভাবের বিষয়টি সমাধানের জন্য ব্যাপকভিত্তিতে সরকার, আন্তর্জাতিক সংগঠন, বৈশ্বিক ক্রেতা ও স্থানীয় কারখানাগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সম্প্রতি করোনা মহামারির সময়ে গার্মেন্ট কারখানা ও শ্রমিকদের জন্য জরুরি অর্থায়নের জন্য আইএলও’র উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীর্ষ পোশাক প্রস্তুতকারক ব্রান্ড, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন ইউনিয়নসহ অংশীদাররা। করোনা মহামারির পরবর্তী অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধারে রেডিমেড গার্মেন্ট খাতে সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাসন্ন ঝুঁকির বিষয়ে ভার্চুয়াল সংলাপ। তাতে উঠে আসতে পারে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে উৎপাদন ও মার্কেট নিয়ে কথা বলা।

এসব উদ্যোগ করোনা মহামারির সময়ে গার্মেন্ট খাতের ক্ষতি সমাধানে সহায়ক হবে। সুরক্ষিত হতে পারেন শ্রমিকরা।

(প্রতিবেদনটির লেখক গ্লাডিস লোপেজ-আসেভেদো, দীক্ষা কোকাস, রেমন্ড রবার্টসন, ডিয়েগো কারডোজো মেডেইরোস। তাদের এই লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের ওয়েবসাইটে। সেখান থেকে অনুবাদ প্রকাশিত হলো)