বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে লসএঞ্জেলেসে আলোচনাসভা

‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবেনা যুক্তরাষ্ট্র’

‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবেনা যুক্তরাষ্ট্র’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার উল্লেখ করে ওয়াশিংটন ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, বাংলাদেশে অব্যাহত মানবাধিকার লংঘন এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিরব থাকবেনা যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এ বার্তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।

গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বের মিত্রদের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দেবার জন্যই বাইডেন শুরুতেই বিশ্বের শতাধিক দেশ নিয়ে ডেমোক্রেসি সামিটে বসেছিলেন বলে জানান মুশফিক। তিনি বলেন, দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ সেখানে আমন্ত্রিত হয়নি। এর একমাত্র কারণ দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, ভোটাধিকার নেই এবং মানুষ কথা বলার অধিকার নেই। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির নামে আওয়ামী লীগ যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুক না কেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের প্রশ্নে আপোষ করবেনা যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলেসে নর্থ হলিউডের চার্চ অব সাইয়েন্টলজি মিলনায়তনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সভায় প্রধানবক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ কমিউনিটি অব লসএঞ্জেলেস এ সভার আয়োজন করে। সভায় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশের চরম মানবাধিকার লংঘন, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন, মুক্তমতে বাধা, ধর্মীয় নেতাদের গ্রেফতার এবং হয়রানিসহ নানান বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং প্রধানবক্তার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন সাইন্টোলজি অব নর্থ হলিউডের প্রেসিডেন্ট ক্যাথি ডেরল। জেসমিন খান ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মুসলেম খানের সভাপতিত্বে এবং সৈয়দ নাসির জেবুলের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাইন্টোলজি অব নর্থ হলিউডের প্রেসিডেন্ট ক্যাথি ডেরল, বিজয় বহর লসএজ্ঞেলেসের চেয়ারম্যান আব্দুল বাসিত, ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু ও সাধারণ সম্পাদক এম ওয়াহিদ রহমান, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এম এ হান্নান, কমিউনিটি নেতা এম ওয়াহিদ রহমান, আব্দুল হান্নান, জিয়াউর রহমান, শাহনেওয়াজ রেজা, আফজাল হুসেন শিকদার, আওলাদ হুসেন সহ আরো অনেকে।

জাস্ট নিউজ সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, "চরম মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের র‍্যাব এবং কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থা দেশের মানবাধিকার দলন বন্ধে বারবার তাগাদা দিচ্ছে সরকারকে। কিন্তু কোনো কথাতেই তারা যেন কান দিচ্ছেনা। এটা বাংলাদেশের জন্য আরও ক্ষতি ডেকে আনবে। "

তিনি বলেন, "সরকার সবচেয়ে বেশী ভয় পায় মানুষকে। মানুষের জাগরণ দেখে তারা ভীতসন্ত্রস্থ। সম্প্রতি বিএনপির মহাসমাবেশে যে দু’টি শূন্য চেয়ার রাখা হয়, সে চেয়ারই তাদের ভয়ের কারণ। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে চেয়ারগুলো যদি ভরে যায় তাহলে অবস্থাটা কী হবে?"

মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন "আমার অধিকার আছে স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করার। কিন্তু আপনি কি করবেন সেটা এখন বাংলাদেশে পুলিশ বলে দিবে। কী বক্তব্য দেবেন সেটাও বলে দিবে তারাই। আমিতো অনুষ্ঠানই করছি সরকারের বিরুদ্ধে বলার জন্য। এ অবস্থা কিন্তু আমরা যারা পাকিস্তানের আইয়ূব খানের বেসিক ডেমোক্রেসির গল্প শুনেছি। এটি সে পরিস্থিতিকেও হার মানিয়েছে। "

তিনি বলেন, "বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লংঘন হয়না তা না, কিন্তু এই সরকার মানবাধিকারের সব সীমাকে লংঘন করেছে।"

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, "যারা সংবাদপত্রের ধারক এবং বাহক, তাদের মধ্যে অনেকেই আপোষরত। অনেকে সুবিধার জন্য ইচ্ছায় করছে, আবার অনেকে অনিচ্ছায়। তারা সংবাদ প্রকাশে সেলফ সেন্সর করছেন। কোনো আর্টিকেল লিখলেও দেখা যাচ্ছে চাপে পরে পরদিন সেটা হয় কিল করতে হয় অথবা ঘুরিয়ে লিখতে হয়। সবক্ষেত্রেই চরম পর্যায়ে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে।"

ধর্মীয় নেতাদের ওপর চলমান নিপীড়নে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে কীনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কর্মী মুশফিক বলেন, "মতপ্রকাশের অধিকার সবার আছে। আমি সবার কথা বলার স্বাধীনতার পক্ষে।"

তিনি বলেন, "ইসলামী বক্তা যারা, যারা দ্বীনের কথা, কোরআন, সুন্নাহর কথা বলেন, তাদের জন্য সমাজের মানুষের হৃদয়ে একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে। তাদেরকে আমরা সম্মানের চোখে দেখি। মসজিদের ইমাম কী খুতবা দেবেন সেটাও এখন ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে লিখে দেয়া হচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের মুক্তমতের অবস্থা। অনেকে আবার ওয়াজের নামে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন সামনে নিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন কিংবা নিজেদের জাহির করে আজগুবি সব গল্প ছড়াচ্ছেন এটি অগ্রহণযোগ্য। তবে কথা বলার স্বাধীনতা এবং নিজের বিশ্বাসের জানান দেবার অধিকার সবার রয়েছে. "

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ব্রিফ্রিংয়ে প্রশ্ন করা এবং তার উত্তর আগেই লিখে দেয়া- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাম্প্রতিক সময়ের দেয়া এক মন্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিক মুশফিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি প্রশ্নটির উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এধরনের মন্তব্য এবং চিন্তাকে হাস্যকর বলে দাবি করেন।

মুশফিক বলেন, "এই ভদ্রলোক (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আমেরিকায় থেকেছেন। এখানকার সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে উনি পরিচিত। এখানে আমার প্রশ্নের স্বাধীনতা আছে। এটাই আমেরিকার ডেমোক্রেসির বিউটি। আমি চাইলেই নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে পারবো। পেছন দিকে থাকাতে হবেনা। হাফিংটন পোস্টের সাংবাদিক মিঃ দত্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন- তুমি যে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে সকাল-বিকাল মিথ্যা বলো এজন্য অনুতাপ হয়না? আমার ঠিক সামনের সারি থেকে তিনি এ প্রশ্ন করেন। এখানে এভাবে কথা বলা যায়। মি ট্রাম্প সাংবাদিকদের শত্রু হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু একটার্মের বেশী থাকতে পারেননি।"