একই দিনে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তা

একই দিনে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তা

একই দিনে ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তা। ১৪ই ফেব্রুয়ারি আলাদা ফ্লাইটে তারা ঢাকা পৌঁছাচ্ছেন। তবে ১৫ই ফেব্রুয়ারি হবে তাদের সফরের কার্যকর দিন। ওই দিনে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক ছাড়াও কর্মকর্তা পর্যায়ে বিস্তৃত আলোচনায় বসবেন তারা। উভয়ে কাছাকাছি সময়েই ঢাকা ছেড়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্পর্ক ‘জোরদার’ করতে আসছেন শোলে: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের মতোই আছে দাবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, সেই সম্পর্ক আরও জোরদার করতেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর আন্ডার সেক্রেটারি ডেরেক শোলে দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন। এ সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তার সফরের আগেই ইউএসএআইডি’র একটি অগ্রবর্তী দল বাংলাদেশে এসেছে। দলটি রোববার কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। তারা সেখানকার পরিস্থিতি সরজমিন দেখে ঢাকায় ফিরেছেন। কাল ডেরেক শোলের কর্মসূচিতে যুক্ত হবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা ডেরেক শোলে ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তার এই সফরটি এজেন্ডাভিত্তিক নয়। তবে এ সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং মানবিক সহায়তার বিষয় প্রাধান্য পাবে। এছাড়া ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস), দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে এই সফরে আলোচনা হতে পারে।

এ সফরেও সরকার র‌্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে গুরুত্ব দেবে। ব্লিঙ্কেনের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্ব সামলে থাকেন মার্কিন এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, র‌্যাব ইস্যুতে অস্বস্তি থাকলেও ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের অন্যান্য ইস্যুগুলো এগিয়ে নিতে আন্তরিক উভয়ে। সে কারণে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার এডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করেন। মূলত ব্যাক টু ব্যাক ওই দু’টি সফরই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুনত্ব নিয়ে আসে। যদিও রহস্যজনক কারণে ৭-৯ই ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা সি ম্যাকডনান্ডের সফরটি শেষ সময়ে এসে স্থগিত করা হয়। সেগুনবাগিচা বলছে, ম্যাকডনাল্ডের সফর স্থগিতের কারণে ডেরেক শোলে’র বাংলাদেশ সফরের তাৎপর্য আরও বেড়ে গেছে। দুই দেশই সফরটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেরেক শোলে তার বাংলাদেশ সফরকে মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক সফরের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কিত কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবার কারণে উচ্চ পর্যায়ের এসব সফর হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশে অবাধ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শোলে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রও নিখুঁত নয়; তবে আমরা নিজেদেরকে আরও ভালো করার, স্বীকার করার এবং উন্নত করার চেষ্টা সবসময় করছি। এ কারণে আমরা যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অবাধ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন, নাগরিক সমাজের সমাবেশ ও মতপ্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ তুলে ধরি, তখন সেটা আমরা অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্বের জায়গা থেকে করে থাকি। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান ডেরেক শোলে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আসছেন আজ, আলোচনা হবে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে ওদিকে ‘শুভেচ্ছা সফরে’ আজ ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কাত্রা। তার সফরে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। কথা হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত দিল্লি সফর নিয়েও। আলোচনায় আসতে পারে আদানির বিষয়টিও। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই অনুষ্ঠানে যোগদানের আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের। তবে সেগুনবাগিচা চাইছে বহুপক্ষীয় ওই আয়োজনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উপাদানও যুক্ত হোক। দিল্লির বিদেশ সচিবের সফরে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সফর নিয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ বছর দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হবে। এসব বৈঠকের বিষয়ে দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কাত্রা ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বিনয় কাত্রার এটি প্রথম ঢাকা সফর। গুড উইল ভিজিট হলেও সফরকালে তিনি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। সেখানে দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা হবে। সচিব বলেন, সব মিলিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো। আগামী ৯ ও ১০ই সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০ এর অষ্টাদশ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। স্বাগতিক ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হবে কিনা? জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বেশি দামে কয়লা কেনার বিষয়টির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে কোনো ইনপুট (তথ্য-উপাত্ত) পেলে আলোচনা হবে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হচ্ছেÑ এটা প্রায় নিশ্চিত। ওই সফরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধনেরও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে। সফরকালে টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনের ডুয়েল গেজে সংস্কার, রেলের রোলিং স্টকের সরবরাহ এবং তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে রেলের সেবায় উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে অগ্রগতি কতটা হলো? তা পর্যালোচনা হবে। সূত্র মতে, চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ নানা স্তরের ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ভারতের অনীহা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রত্যাশা দীর্ঘ এক যুগ পর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, নৌ পরিবহন, বাণিজ্য, পরিবেশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক হবে।