কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, এ সপ্তাহে বন্যার শঙ্কা

কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, এ সপ্তাহে বন্যার শঙ্কা

খুব বেশি বৃষ্টি না হলেও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদী ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্য নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী একেবারে কিছু নিচু এলাকায় ঢলের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পানি বাড়তে থাকলে সপ্তাহের দু-তিন দিনের মধ্যে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পূর্বাভাসের বরাতে জানিয়েছে, মধ্য জুলাইয়ে জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে কুড়িগ্রামে স্বল্প মেয়াদী একটি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে কয়েকদিন বৃষ্টিপাত বাড়তে পারেও বলছেন তারা। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনও তথ্যের উপর ভিত্তি করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত, উদ্ধার তৎপরতাসহ খাদ্য সহায়তা প্রস্তুত রাখার কথা বলছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা।

পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুধকুমারের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। ধরলার ব্রিজ পয়েন্টে বেড়েছে ৪ সেন্টিমিটার। তবে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচে অন্যদিকে শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে মাঝারি বৃষ্টিপাতের খবর গেলেও বুধবার তেমন বৃষ্টির খবর মেলেনি।

পাউবো বলছে, মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে কুড়িগ্রামে স্বল্প মেয়াদী একটি বন্যার শঙ্কার কথা বলছে পূর্বাভাস কেন্দ্র। পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে করে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি সমতলে কখনও কখনও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। চলতি জুলাইয়ের ১৭-১৮ তারিকের দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা ছুঁতে পারে। ফলে কুড়িগ্রামে স্বল্প মেয়াদী বন্যা হতে পারে।’ এরপর নদ-নদী স্বাভাবিক হতে পারে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, স্থানীয় প্রশাসন সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ায় বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার জন্য স্কাউট, রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতসহ চারটি উদ্ধারকারী বোট, চারটি স্পিড বোট ও দুই শতাধিক স্থানীয় নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬৫০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা জরুরি প্রস্তুতি মোকাবিলার জন্য মজুদ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুতসহ পশু খাদ্যের যাতে ঘাটতি না পরে সে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য বন্যায় নাগেশ্বরী, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।