করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান

করের টাকায় মন্ত্রী-সচিবের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠান

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রামে তার মায়ের নামে ‘করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল’ নির্মিত হচ্ছে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। পাঁচতলা ভবনের এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থ বা ৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদপ্তর, যেটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করছে মন্ত্রীর মায়ের নামের এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার উন্নয়ন সংস্থা। নির্মাণকাজ পেয়েছে মন্ত্রীর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণকাজ চলতে থাকা হাসপাতালটির এক কিলোমিটারের মধ্যেই সরকারি উপজেলা হাসপাতাল রয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রীর অধীন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের মাধ্যমে মন্ত্রীর মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা স্বার্থের সংঘাত। মন্ত্রীরা শপথ নেন এই বলে যে ‘তারা অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না।’ নিজের মায়ের নামে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় নিজের অধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অর্থ ব্যয় শপথের বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত।

অবশ্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু মন্ত্রী নন, আমলারাও নিজের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনা করেছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৮টি প্রকল্পের (ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছাড়া) মাধ্যমে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করেছে অথবা করছে, যার অন্তত ১১টি মন্ত্রী অথবা আমলাদের মা-বাবা অথবা স্বজনের নামে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে হাসপাতাল, প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা সমজাতীয় স্থাপনা নির্মাণ ও পরিচালনা করে এনজিও। নিয়ম হলো, শহর এলাকায় প্রকল্প করতে মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশ ও গ্রাম এলাকায় ৮০ শতাংশ অর্থ সরকার দেবে, বাকিটা দেবে এনজিও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যেসব এনজিও প্রকল্প পাচ্ছে, সেগুলোর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সক্ষমতা নেই। এনজিওগুলো মূলত নিজেদের স্বজনের নামে মন্ত্রী-সচিবেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থাপনা নির্মিত হলেও সেবাদান কার্যক্রম চালু হচ্ছে না।- প্রথম আলো