বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে চরম ভোগান্তি

বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে চরম ভোগান্তি

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে এখন প্রায় প্রতিদিন বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে গিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং তাদের প্রতিনিধিদের চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভোগান্তির কথা অস্বীকার করে বলছেন, ছাড়পত্র নেয়ার সময় এজেন্সির প্রতিনিধিরাই টিকিট আর ভিসা মেয়াদ শেষ হওয়ার অজুহাত তুলে কর্মকর্তাদের রুমে কমবেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে কাজের পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। এভাবে তো চলতে পারে না? এখন থেকে সিরিয়াল মেনে সবকিছু করা হবে। এজেন্সির মালিক এবং প্রতিনিধিরা যতই হই চই করুক না কেন কোনোভাবেই আর কোনো অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ৪টার দিকে কাকরাইলের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, ৪০-৫০ জন রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি তাদের কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্র না হওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। পাশেই বহির্গমন ভবনের প্রধান গেটের সামনে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের ডিউটি করতে দেখা যায়। কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদেরও জটলার মধ্যে দেখা যায়। এ সময় তারা একজন আরেকজনকে বলছিলেন, আমার ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। এখনো ফাইলের সিরিয়াল আসেনি। একপর্যায়ে তারা সবাই এক হয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। আনসারদের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা কেউ ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় যেতে পারেননি।

সেখানে ক্ষোভ জানানোর দলে থাকা একজন বুলবুল। তিনি তার হাতে একটি চিরকুটে কর্মীর নাম ও রিক্রুটিং এজেন্সি আর-এল নম্বর লেখা দেখিয়ে বলেন, আমি গত সোমবার সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর জন্য বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। কিন্তু দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জানতেই পারছি আমরা ফাইলটা কোথায় আছে। তিনি বলেন, আমার আরেকটা কর্মীর ফ্লাইটও আজ রাতেই। এখন বহির্গমন ছাড়পত্র না হলে বিরাট লস হয়ে যাবে। কী করি, বুঝতে পারছি না। এভাবে হলে তো শ্রমিক যাওয়া কমে যাবে। এমনিতেই সৌদি সরকার নতুন করে ২৮টি পদের কর্মীদের জন্য সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করেছে। গত ২৫ জুলাই থেকে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। ভিসা স্ট্যাম্পিং আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে পারছি না। কারণ ব্যুরো থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সনদ সাথে না দিলে কোনো কাজ হবে না। আমরা এখন সনদ পাব কোথায়? শুধু বুলবুল নন, তার মতো সবার একই ধরনের অভিযোগ। তারা আরো অভিযোগ করেন, বিএমইটিতে একটি সিন্ডিকেট আছে। তারা টেলিফোনে তাদের ফাইল সই করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর আমরা এখানে নিয়ম মেনে ফাইল জমা দিয়েও ফাইল কোথায় আছে জানতে পারছি না।

পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, এখানে নিয়মশৃঙ্খলা না থাকার কারণে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও কাজ আর শেষ হতে চায় না। অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও আমরা বাসায় যেতে পারি না। এখন থেকে আমি নতুন নিয়ম চালু করেছি। এটি হচ্ছে এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা তাদের কর্মীর ফাইল জমা দিয়ে সিরিয়াল নম্বর নিয়ে চলে যাবেন। সময় হলে তারা তাদের ফাইল আমাদের লোকদের কাছ থেকে বুঝে নিবেন। এখানে কারো আসার দরকার নাই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এজেন্সির প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত আমার কাছে এসে আবদার করেন, স্যার আমার কর্মীর ফ্লাইট আজ রাতেই। না গেলে ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। এভাবে সবাই যদি এসে অবৈধ আবদার করতে থাকে, তাহলে শৃঙ্খলা থাকবে কিভাবে? ভিসার মেয়াদ তো ছিল পাঁচ মাস। তখন তারা কেউ কেন প্রসেসিং করেনি। শেষ সময়ে এসে কেন বিরক্ত করে তারা। বলেন, এখন থেকে নিয়ম মতো ফাইল জমা হবে। নিয়মের বাইরে কোনো কাজ হবে না।

অভিযোগ আছে স্মার্ট কার্ড যে কক্ষ থেকে প্রিন্ট দেয়া হয় সেখানে দায়িত্বরত আওলাদ নামের একজন কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের সদস্যদের মদদ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিদের। তবে এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে আওলাদের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।