খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে হাসিনা

বাকিটা আইনগত ব্যাপার

বাকিটা আইনগত ব্যাপার

অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার হাতে যতটুকু রয়েছে এক্সিকিউটিভ আদেশ দিয়ে আমি সেটুকু করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’

হাসিনা বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগার থেকে বের করে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এটাই তো বেশি। এর বাইরে আর কী চাওয়ার আছে তাদের।’

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলেনে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ ও অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকার আলোচনা করবে কি না এবং অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেবে কি না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান?

সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারগার থেকে বের করে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছি, এটাই কি বেশি না?’

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সাংবাদিকে পাল্টা প্রশ্ন করে আরও বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করতো, আপনি কি তাঁকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে? বা আপনার পরিবারের কাউকে যদি হত্যা করিয়ে আবার বিচার না করে পুরস্কৃত করতো, হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিতো, তাদের জন্য আপনি কী করতেন?’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এরপর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যেমে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওনারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের শেল্টার দিয়েছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাত ২টার দিকে তাকে হাসপাতালের কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনায় দুদফা বৈঠক করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। এই বৈঠকে বিদেশি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এতে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের বরাত দিয়ে পারিবারিক সূত্র জানায়, সবদিক থেকে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নিতে পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিতে আবারও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার হাতে যা ছিল, তা দিয়ে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’

উল্লেখ্য, কথিত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে গৃহবন্দি বলছেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে শর্তও দেওয়া হয়েছে।