তারুণ্যের রোডমার্চ

অতিদ্রুত পদত্যাগ করেন: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

অতিদ্রুত পদত্যাগ করেন: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

বগুড়ায় শুরু হওয়া তারুণ্যের রোডমার্চ শেষে রাজশাহীর সমাবেশে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারকে মানুষ না করে দিয়েছে। আর দেখতে চায় না। তবে এখনো সময় আছে অতিদ্রুত পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন।

রাজশাহী নগরের লালন শাহ মুক্তমঞ্চ-সংলগ্ন রাস্তায় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে এ রোডমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সমাবেশে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।

যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের (টুকু) সভাপতিত্বে বিকেলে এই সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১১২ কিলোমিটার পথের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে রোডমার্চ রাজশাহীতে পৌঁছে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে। সমাবেশ শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে। রাত পৌনে আটটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে থাকতে পারব কি না, দেশে গণতন্ত্র থাকবে কি না, সেই প্রশ্নে আমরা আজ গভীর সংকটের সম্মুখীন। আওয়ামী লীগ আমাদের সকল অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলাম। আমাদের নেতা-কর্মীরা ১৯৯০ সালে লড়াই করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল, এই সরকার সেই গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালত, বিচার বিভাগ, প্রশাসন সবকিছুকে তারা ভেঙে দিয়েছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যারা তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তাদের গুম করছে, হত্যা করছে, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরে দিয়েছে। তারা সবচেয়ে খারাপ কাজটি করেছে, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। আজকে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করেছে। তারা নেত্রীকে বিনা চিকিৎসায় এমন অবস্থায় রেখেছে, বাইরে চিকিৎসা নিতে যেতে দিচ্ছে না।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চের সামনে নারীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘মা-বোনেরা আপনারা নিজেরাও ভালো জিনিসটা কিনতে পারেন না, আপনাদের স্বামীরাও পারেন না। সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। বগুড়া থেকে আসার সময় রাস্তায় একটি মেয়ে বলেছে, দুইটা জিনিস চাই, এক হাসিনার পদত্যাগ আর খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। বিশ্ববাসীও এ দেশে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই জেগে উঠি।’

পরবর্তী আন্দোলনের ঘোষণার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তারা যে রাজপথে নেমেছেন, সেখান থেকে ফিরে যাবেন না। এই সরকারের পতন ঘটিয়েই তারা ঘরে ফিরবেন।

জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়ের মোসাদ্দেক হোসেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী, সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নওগাঁ হয়ে রোডমার্চ রাজশাহীর মোহনপুরে প্রবেশ করে। মোহনপুরের কেশরহাট পৌর এলাকায় কেশরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন আলোর নেতৃত্বে বেলা আড়াইটার থেকে সমাবেশে নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন। হুডখোলা গাড়িতে এই সমাবেশ অতিক্রম করার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। মোহনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রশিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন, সদস্যসচিব বাচ্চু রহমান দুপুর থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মোহনপুর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে। বিকেল ৫টা ৫৬ মিনিটে রোডমার্চ ওই কার্যালয় অতিক্রম করার সময় নেতা-কর্মীরা সেখানে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ঘিরে ধরেন, বাধ্য হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেখানে গাড়ি থেকে নামেন।

তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির শুরুতে রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া শহরতলির এরুলিয়া বাজারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার চুরি করেছে। ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনেও ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে। কিন্তু জনগণ এবার আর ভোট চুরি করতে দেবে না। গোটা বিশ্ব এখন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি।

বগুড়া থেকে রাজশাহী বিএনপির তারুণ্যের রোডমার্চ রবিবার বেলা দুইটায় নওগাঁর জেলখানা রোড মোড়ে পৌঁছালে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভোটের অধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র মুক্তির যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে হেরে গেলে বিএনপির খুব বেশি ক্ষতি হবে না। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। এই যুদ্ধে হেরে গেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ।