ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে আইসিসিতে যাবে দ. আফ্রিকা

ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে আইসিসিতে যাবে দ. আফ্রিকা

গাজায় মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেছেন জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম বিষয়ক এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, অনুমোদিত একটি রুটে ত্রাণবাহী গাড়িবহরে গুলি করেছে ইসরাইলিরা। এরপরই ওই মন্তব্য করেন গ্রিফিথস। এরই মধ্যে গাজায় ইসরাইল যুদ্ধের নামে গণহত্যা চালাচ্ছে এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে। ওদিকে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে যদি লেবাননের দক্ষিণ থেকে হামলা অব্যাহত থাকে তাহলে যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরাইলি একজন কর্মকর্তা। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এমন প্রত্যয় ঘোষণা করেন। ফিলিস্তিনি একজন দূত ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, গাজার মানুষকে ইসরাইল মৃত্যু অথবা বাস্তুচ্যুত হওয়ার অপশন দিচ্ছে।

এরই মধ্যে তাদের হামলায় গাজায় কমপক্ষে ২১ হাজার ৫০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫ হাজার ৯১৫ জন।

ওদিকে জাতিসংঘে বৃটেনের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড শুক্রবার সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় মানবিক সঙ্কট থামানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হলে সহিংসতা, রোগব্যাধি এবং দুর্ভিক্ষ থেকে আরও অনেক মানুষ মারা যাবেন। তিনি গাজার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনের দখল হয়ে যাওয়া ভূখণ্ডে সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালকের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তাকে বলা হয়েছে, গাজায় যেসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জনই শিশু। উডওয়ার্ড আরও বলেন, ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৮৫০০ শিশুকে। যারা আহত হয়ে বা কোনোমতে বেঁচে আছে, তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বাড়িঘর, স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, না হয় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ মাসে আরও আগের দিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক ত্রাণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বৃটেন। ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে লন্ডন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় বেসামরিক মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ, অস্বস্তি প্রকাশ করেছে তারা।

ওদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর অব্যাহত প্রায় তিন মাসের হামলার পর গাজার মানুষ বলেছেন, তারা নিঃশ্বেষ হয়ে গেছেন। তারা এই যুদ্ধের অবসান চান। দক্ষিণে রাফা সীমান্তে একটি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী উম লুয়াই আবু খাতের। তিনি বলেছেন, অনেক যুদ্ধ হয়েছে। আমরা এখন একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। এই কঠিন ঠাণ্ডার মধ্যে আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অবস্থান পরিবর্তন করছিই। প্রতিটি দিন এবং রাতে বোমা পড়ছে। পৃথিবীর মানুষ যখন নতুন বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন যেকোনো সময় আমাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়তে পারে। আহমেদ আলবাজ (৩৩) বলেন, ২০২৩ সাল তার সারাজীবনের সবচেয়ে খারাপ বছর। ‘আমরা যেন নরকযন্ত্রণার মধ্যে আছি। প্রতিক্ষণ শুধু লাশ গুনছি। এই যুদ্ধের ইতি চাই আমরা। আমাদের নিজেদের বাড়িতে নতুন বছর শুরু করতে চাই। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক’।

ওদিকে ইসরাইলি কর্মকর্তা ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনে ত্রাণ বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি। তিনি বলেছেন, গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর মধ্যে ফারাক আছে এমন ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে তারা। শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, ত্রাণ সরবরাহে গ্যাপ পরার জন্য সরাসরি দায়ী ইউএনআরডব্লিউএ- এমন রিপোর্ট প্রকাশ করছে তারা। এসব খবর ইসরাইল এবং অন্য মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলো লুফে নিয়ে তা প্রচার করছে। পক্ষান্তরে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।