সেমিফাইনালে ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের বিদায়

সেমিফাইনালে ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের বিদায়

ম্যাচটিকে কেন কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলা হচ্ছিল, ৯০ মিনিটজুড়ে যেন তারই প্রদর্শনী হলো। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, গোল, সমতা, উত্তেজনা- সবই ছিল ম্যাচে। পরতে পরতে আগ্রাসন ছিল লুকিয়ে। যদিও ইংল্যান্ডের আধিপত্যই চোখে পড়েছে, তবে গোলের খেলা ফুটবলে গোলেই হিসেব মিলে। যেখানে ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালে ফ্রান্স।

আক্রমণের শুরুটা ছিল ফ্রান্সের পায়েই। একের পর আক্রমণের ফলে মাত্র ১৭ মিনিটেই ফরাসিরা গোল আনন্দে ভাসে। তবে গোল খেয়েই ঘুম ভাঙে থ্রি লায়ন্সদের, মুহুর্মুহু আক্রমণে কাঁপিয়ে তুলে ফ্রান্সের রক্ষণ দেয়াল। তবে একবার সেই রক্ষণে ভাঙণ ধরাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে, যার বড় কারণ ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিস।

কাতার বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয়েছিল ফুটবলবিশ্বের দুই পরাশক্তি ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। সেমি ফাইনালের লড়াইয়ে কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচে লড়ছে দুই দল।

দুটি দলই ছিল এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় ছন্দে ছিল দুই দলই। বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড,দুই দলের কাছে এই ম্যাচ সেমিফাইনালের লড়াই ছাপিয়ে পরিণত হয়েছিল দুই দলের অহং-এর লড়াইয়ে।

ম্যাচের ১১ মিনিটের মাথাতেই লিড পেয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। সুবিধাজনক জায়গায় বল পেয়ে সোজাসুজি শট নেন অলিভিয়ের জিরুদ। ইংলিশদের গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড দ্রুত রিফ্লেক্স দেখিয়ে থামিয়ে দেন শটটি।

তবে গোলের খাতা খুলতে বেশিক্ষণ চেষ্টা করতে হয়নি ফরাসিদের। ১৭ মিনিট সময়ে দলের ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার শুয়েমেনির গোলে এগিয়ে যায় লে ব্লুজরা। কাউন্টার অ্যাটাকে গোলটি করেন তিনি। গ্রিজম্যানের পাস রিসিভ করে বক্সের বাইরে ২৫ গজ দূর থেকে শক্তিশালী এক শটে সোজা ইংল্যান্ডের গোলপোস্টে বল ঢোকান শুয়েমেনি। শুরুতেই এক গোলে পিছিয়ে পড়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।

অবশ্য গোল হজম করলেও পুরোপুরি দমে যায়নি ইংলিশরা। আক্রমণ চালিয়ে যায় তারাও। ২২ মিনিট সময়ে বুকায়ো সাকার রিভার্স পাসে বল পেয়েছিলেন হ্যারি কেইন। বল নিয়ে ফরাসি ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বল দেন হেন্ডারসনকে, হেন্ডারসনের শট থেকে ঠিকমতো বল রিসিভ করতে পারেননি জুড বেলিংহাম।

২৬ মিনিটের মাথায় ফরাসি ডিফেন্ডার উপামেকানো হ্যারি কেইনকে ফাউল করলে পেনাল্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। ভিএআর চেকিং-এর পর গুরুতর ফাউল ধরা না পড়ায় পেনাল্টি দেয়া হয়নি। ২৯ মিনিট সময় হ্যারি কেইন বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়লে গোলের জোরালো সম্ভাবনা জেগে ওঠে। কিন্তু তার শট ক্লিয়ার করেন কেইনের টটেনহ্যাম হটস্পার্স ক্লাব সতীর্থ ফরাসিদের গোলরক্ষক হুগো লরিস।

৩১ মিনিটের মাথায় ফিল ফোডেন কর্নার থেকে একটি শট নেন। হ্যারি ম্যাগুয়ার ও জুড বেলিংহ্যাম দু'জনেই বল রিসিভ করে গোলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর রাবিওট বলটি ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন।

৩৯ মিনিটে একটি শর্ট ফ্রি-কিক থেকে গ্রিজম্যান বক্সের বাইরে ওসুমান ডেম্বেলেকে লক্ষ্য করে বল বাড়ান। ডেম্বেলে বল দেন থিও হার্নান্ডেজকে। বলটি তার পর এমবাপের কাছে গেলে তিনি গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন। কিন্তু বলটি চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। গোলের একটি সুযোগ মিস করেন এম্বাপ্পে।

দ্বিতীয়ার্ধে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। ৪৮ মিনিট সময়ে বল নিয়ে আক্রমণে যান জুড বেলিংহ্যাম। তরুণ মিডফিল্ডারের নেওয়া দুরন্ত একটি শট বাঁচান লরিস। পরের মিনিটেই ফোডেনের কর্নার থেকে মারা শটে উড়ে আসা বল ধরে ফেলেন ফরাসি কিপার।

৫২ মিনিট সময়ে ইংলিশ মিডফিল্ডার বুকায়ো সাকা রাইট ফ্ল্যাঙ্ক থেকে ড্রিবল করে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়লে, ফরাসিদের গোলস্কোরার শুয়েমেনি তাকে ফাউল করে বসেন। ফলে অবধারিতভাবেই এবারে পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। স্পটকিক থেকে অনবদ্য শটে লক্ষ্যভেদ করেন ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। ফলে ১-১ গোলের সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে এটি হ্যারি কেইনের চতুর্থ পেনাল্টি গোল। এছাড়া এই গোলের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বাধিক গোলস্কোরার, ওয়েন রুনিকে ছুঁয়ে ফেললেন হ্যারি কেন। দুজনের গোলসংখ্যাই ৫৩টি।