চীনের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানের রহস্যময় সম্পর্ক, নেপথ্যে কী?

চীনের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানের রহস্যময় সম্পর্ক, নেপথ্যে কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে চীনের পক্ষ নিয়ে কাজ করার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয় চীনের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, উহানের গোপন এক ল্যাবে বিপদজ্জনক ভাইরাস বা সামরিক জীবাণু অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে চীন এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভাইরাসের সূত্রপাত নিয়ে চীন লুকোচুরি খেলছে। তাই তাদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা তদন্ত করছে। যদি করোনাভাইরাস চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি ল্যাব থেকে শুরু হয় তবে চীনকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পিয়েনে বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার বিষয়টি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রাদুর্ভাব কীভাবে হল এবং কীভাবে ছড়াল- এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন; এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া জোর দিচ্ছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট ও ফক্স নিউজসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, উহানে থাকা চীনের ল্যাব থেকেই করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে। কারণ, ওই ল্যাবে বিপজ্জনক সব ভাইরাস বা জীবানু অস্ত্র নিয়ে গবেষণা হতো।

চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করোনাভাইরাস হলো তাদের তৈরি একটি জীবাণু অস্ত্র। অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য সাধারণের মধ্যে জীবাণু ছেড়ে দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ। তাপরই তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে। চীনের গোপন জীবাণু অস্ত্র তৈরি কর্মসূচির সঙ্গে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তবে চীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে উল্টো সাফাই গেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটি বলছে, তাদের হাতে আসা সমস্ত প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে তারা জানতে পেরেছেন জৈব গবেষণাগার নয় বাদুড়ের মাধ্যমেই এই ভাইরাসের উৎপত্তি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ফেডেলা শায়েব জেনেভায় বলছেন, ‘প্রাপ্ত সকল প্রমাণাদি অনুযায়ী ভাইরাসটি প্রাণী থেকেই মানুষে ছড়িয়েছে। এটা কোনো গবেষণাগারে তৈরি কিংবা সেখান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়নি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ ধরনের ভূমিকাকে পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রেইন মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই দুর্যোগে তাদের সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এটা এমন নয় যে বহু বছর ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় প্রতিবছর ৫০ কোটির বেশি ডলার অর্থায়ন করে। যেখানে চীন মাত্র ৪ কোটি ডলার অর্থায়ন দেয়। তবুও তারা চীনের পক্ষ হয়ে কাজ করছে।

ও ব্রেইন বলেন, চীনের দুর্যোগের মধ্যেও গত ১৪ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয় করোনা একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় না। যেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের ভ্রমণের ওপর যে সব দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তাদের সমালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ বিষয়ে ও ব্রায়ান বলেন, এটা সম্পূর্ণ একটি ভুল উপদেশ ছিল। যেটা অনেক বিশেষজ্ঞই প্রত্যাখান করে দিয়েছিলেন।

এদিকে গত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি করোনা নিয়ন্ত্রণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ব্রেইন বলেন, যদি এটা অভূতপূর্ব সাফল্য হয় তাহলে আর কিছু বলার নেই। এটি এখন ১৮৪টি দেশে ছড়িয়েছে।

শ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাইওয়ান যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মানবদেহ থেকে মানবদেহে পরিবাহিত ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বিষয়টিকে অজ্ঞাত কারণে এড়িয়ে যান; এমনকি এ বছরের জানুয়ারি মাসেও তিনি এই ভাইরাস মানব শরীরের সংস্পর্শে ছড়ায় না বলে বিবৃতি দেন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কী মূলত চীনের হয়েই কাজ করছে। কিন্তু কেন? এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস এর সঙ্গে চীনের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। তিনি একজন সাবেক কমিউনিস্ট রাজনীতিক। যিনি ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন। ২০১৭ সালে চীনের জোর লবিংয়ের ফলে ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে যে গোপন জীবানু অস্ত্রের গবেষণা হচ্ছে এটি বৃহৎ শক্তিগুলোর সবাই ওয়াকিবহাল ছিল। এমনকি এমন কিছু ঘটতে চলেছে এটি কম বেশী যুক্তরাষ্ট্র অবহিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রেসিডেন্ট বুশ জুনিয়র এর আমল থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক করছিল। প্রেসিডেন্টগণও জনগণকে সতর্ক করতেন। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে পুরো পৃথিবীকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে চীনের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি ভাইরাস ছড়ানোর মতো কাজটি করবে কেন? কিসেইবা প্রমাণ হবে যে চীন ইচ্ছে করেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে! এগুলো বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। চীনপন্থীদের পাল্টা দাবিও রয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস ছড়িয়ে চীনকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। এর একমাত্র ছোট্ট উত্তর হচ্ছে, এই পুরো মহাবিপর্যয়ে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত কোন দেশ এবং লাভবান হয়েছে কোন দেশ; এটি বিশ্লেষণ করলেই উত্তর সহজ অংকের মত।

তারপরেও তথ্য উপাত্ত এবং বিশ্ব রাজনীতি ও মহামারীর পরিস্থিতি একটু নজর দিলেই এ অপকর্মে সম্পৃক্ত দেশের চিত্রটি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ মহামারীতে চীনের একমাত্র উহান ছাড়া কোন প্রদেশে ক্ষতি হয়নি, বরং অর্থনৈতিকভাবে চীনই কেবলমাত্র সংহত রয়েছে; শুধু তাই নয় নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে এর মধ্যেও লাভবান হচ্ছে এবং সকল দেশের সাথে প্রতারণা করে চলেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো যে চীনের বন্ধু দেশগুলোতে ভাইরাসের থাবা অনেক কম বিস্তার করেছে? অথচ চীনের বিরোধী ইউরোপ ও আমেরিকা তছনছ হয়ে যাচ্ছে। এসব দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে? এর পেছনে কী চীনের কোনো হাতই নেই?