ফাঁস হওয়া ফোনালাপের তদন্ত চেয়ে রিটের শুনানি পেছাল

ফাঁস হওয়া ফোনালাপের তদন্ত চেয়ে রিটের শুনানি পেছাল

আড়ি পাতা প্রতিরোধ ও ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনায় কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি পিছিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার সময় আবেদন মঞ্জুর করেন। আদালত বলেন, দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো।

আড়ি পাতা প্রতিরোধ ও ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ২০টি ঘটনায় কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে ১০ আগস্ট রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। রিটটি শুনানির জন্য আজ কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার দুই সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান। এর বিরোধিতা করে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এক সপ্তাহ সময় দেওয়া যেতে পারে বলেন। পরে আদালত দুই সপ্তাহ সময় দেন।

ফোনালাপে আড়ি পাতা প্রতিরোধে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়ে গত ২২ জুন ১০ আইনজীবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব না পেয়ে ওই ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ১০ আগস্ট সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন।

রিটে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০টি আড়ি পাতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ফোনালাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ভিকারুননিসা নূন কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ফোনালাপ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের ফোনালাপসহ ২০টি ঘটনা রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম।

২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। বিটিআরসি আইনের ৩০ (চ) ধারা অনুসারে টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭১ ধারা অনুযায়ী আড়ি পাতা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি।

রিটে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া রায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ এসেছে। রায়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০ (১) (চ) ধারা এবং সংবিধানের ৩৯ ও ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কমিটি গঠন করে ফাঁস হওয়া ব্যক্তিগত ফোনালাপের উল্লিখিত ঘটনাগুলো তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বণিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, জি এম মুজাহিদুর রহমান, ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।

এমজে/