অনুমান-নির্ভর অভিযোগে ঢাবির হলে শিক্ষার্থীর মাথা ফাটালো ছাত্রলীগ কর্মীরা

অনুমান-নির্ভর অভিযোগে ঢাবির হলে শিক্ষার্থীর মাথা ফাটালো ছাত্রলীগ কর্মীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আখলাকুজ্জামান অনিক নামে এক শিক্ষার্থীকে ব্যাপক মারধর ও কাঠের টুকরো দিয়ে মেরে মাথা ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। নিজেদের সঙ্গে হওয়া এক ঘটনায় ভুক্তভোগী জড়িত থাকতে পারে-এমন অনুমান থেকেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা যায়।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত আখলাকুজ্জামান অনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের একজন শিক্ষার্থী।

এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে- ছাত্রলীগ সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মাসফিউর রহমান,২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সফিউল্লাহ সুমন (পিটার),ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাব্বির আল হাসান ও সাংবাদিকতা বিভাগের নাইমুর রশিদ নাঈমের বিরুদ্ধে। এরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সজিবুর রহমান সজীবের অনুসারী হিসেব পরিচিত। সজীব ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী। তবে হামলায় এই চারজন ছাড়াও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরো দশ থেকে বারো জন অংশ নিয়েছেন বলে জানান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়,আজ সকালে আটটার দিকে অভিযুক্তরা অনিককে তার রুম থেকে ডেকে বের করে। এরপরই তারা অনিককে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে।

মারধরের সময় হামলাকরীরা অনিকের বিরুদ্ধে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েকদিন আগে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আনে। তবে অনিক উদ্যানের দুর্ব্যবহার করা ব্যক্তিটি সে নয়, তারা তাকে চিনতে ভুল করছে বলে জানায়। তবে হামলাকারী তার পোশাক ও চেহারা দেখতে সেই ব্যাক্তিটির মতই উল্লেখ করে মারধর অব্যাহত রাখে। মারধরের এক পর্যায়ে কাঠের টুকরা দিয়ে অনিকের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী (অনিক) মানবজমিনকে বলেন, মিথ্যা অভিযোগ ও শুধু ধারনা থেকেই আমার উপর এ বর্বর হামলা চালায় তারা। আমি ঘুমের মধ্যে ছিলাম। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে তারা আমার উপর উপর্যপুরি হামলা শুরু করে। কাঠ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং শরীরের অন্যন্য জায়গায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে। যার আমি ফলে গুরুতর জখম হই। তারা আমার ফোনও কেড়ে নেয়। এ সময় বাধা দিতে আসলে তারা আমার রুমের এক বন্ধুরকে মারধর করে।

উদ্যানে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ব্যবহারে তো দূরের কথা সেদিন আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই ছিলাম না। সত্যি বলতে শেষ কবে উদ্যানে গিয়েছি সেটিও মনে করতে পারছিনা। সেদিন পুরোটা সময় আমি ডিপার্টমেন্টের ক্লাস-এসাইন্টমেন্ট নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। তারা স্রেফ ধারণা করে আমাকে আক্রমণ করে। হামলাকারীদের আগে থেকে চিনতেন না বলেও জানান তিনি।

অনিক আরো বলেন, আহত অবস্থায় আমার বিভাগের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক মহোদয়ের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নেই। আমার মাথায় সাতটি সেলাই পড়েছে। আজ সন্ধ্যায় আমার স্নাতকোত্তর ২য় সেমিস্টারের অভিনয় কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিবাকবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে ওই হল ছাত্রলীগ সভাপতি সজিবুর রহমান সজীব বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হল প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবে। এক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। অভিযুক্তরা আপনার গ্রুপের অনুসারী কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বলেন, হলে যারা থাকে তারা তো কারো না কারো রাজনীতি করে। এটা তো আর আমাদের নির্দেশনা থাকে না।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির জানান, এ বিষয়ে আমি শুনেছি। ইতিমধ্যে দায়িত্বরত শিক্ষককে সেখানে পাঠিয়েছি। তিনি কথা বলেছেন। তবে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। আমরা আগামীকাল ১০টায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।