কারাগারে দুদকের অভিযান

এসপি বাবুল, ওসি সাইফুলসহ ১১ আসামিকে পেল হাসপাতালে

এসপি বাবুল, ওসি সাইফুলসহ ১১ আসামিকে পেল হাসপাতালে

ফেনী জেলা কারাগারে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানের সময় পুলিশের আলোচিত সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও স্বর্ণ ডাকাতি মামলার আসামি ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি সাইফুল ইসলামসহ মোট ১১ জনকে কারা হাসপাতালে পেয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। এর মধ্যে অভিযান পরিচালনার সময় সাবেক ওসি সাইফুল ইসলামের কারা হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ভর্তি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পায়নি দুদকের তদন্ত দল।

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জানান, ফেনী জেলা কারাগারের জেল সুপারের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা এবং অসুস্থ কয়েদিদের জন্য হাসপাতাল ওয়ার্ডের সিট বরাদ্দ না দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে সুস্থ ব্যক্তিদের সিট দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তে দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল রোববার অভিযান পরিচালনা করে।

দুদক জানায়, এক অভিযোগকারী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ফেনী জেলা কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বন্দিদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে ও কারা ক্যান্টিনে খাবারের মূল্য বেশি রাখছেন। এছাড়া বন্দিদের মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য সরকারি খরচের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, কারা হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের ভর্তি না করে টাকার বিনিময়ে সুস্থ রোগীদের ভর্তি করার ও বন্দিদের সরকারিভাবে বরাদ্দ করা খাবার না দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করছে।

অভিযান পরিচালনার সময় দুদক টিম দেখতে পায়, কারা হাসপাতালে পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও স্বর্ণ ডাকাতি মামলার আসামি ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি সাইফুল ইসলামসহ মোট ১১ জন আসামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে অভিযান পরিচালনার সময় সাইফুল ইসলামের কারা হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ভর্তি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বললে তারা দুদককে জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ফি দিয়ে তারা সেবা পাচ্ছেন। ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্তে রেকর্ডপত্র, জেল সুপার ও জেলারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সংক্রান্তে আয়কর নথি এবং সহকারী প্রধানরক্ষী মনির হোসেনের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকরি করা সংক্রান্তে অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

জেলা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৫ই জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের কাছে নিজাম রোডে সন্তানের সামনে নির্মমভাবে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। চট্টগ্রামের আলোচিত মিতু হত্যা মামলায় কারাবন্দি তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২১ সালের ২৯শে মে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকে তিনি ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া ২০২১ সালের ৮ই আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ২০টি স্বর্ণের বার নিয়ে ব্যবসায়ী ঢাকা যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায় ডাকাতির কবলে পড়ে। ওই মামলার প্রধান আসামি ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) (পরে বহিষ্কৃত) মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়াসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তা (জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোতোহের হোসেন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অভিজিৎ বড়ুয়া ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ রানা) ফেনী কারাগারে বন্দি রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তারা কারাগারে প্রভাব বিস্তার করে সুবিধা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফেনীর সোনাগাজী আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানি মামলা আসামি মাদ্রসারা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দোলা কারাগারে বন্দি থেকে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যা মামলার আসামিদের সাথে বৈঠক এবং ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী নির্দেশে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা ফেনী কারাগারে তৎকালীন বন্দি যুবলীগ নেতা শাখাওয়াতকে কারাগারে গিয়ে হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তৎকালীর জেল সুপার ও জেলারকে শোকজ ও অন্যত্র বদলি করেছিলেন কারা মহাপরিচালক।