জিডিআইয়ের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা ঢাকার

জিডিআইয়ের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা ঢাকার

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) যুক্ত হওয়ার অনুরোধ যাচাই করে দেখছে বাংলাদেশ। জিডিআইয়ে কী আছে, এর গুরুত্ব কতটা, এতে যুক্ত হলে কী ধরনের সুফল পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত আগস্টে ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠককালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। পরে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, চীনের এই অনুরোধ যাচাই করে দেখা হবে।

ওয়াং ইর অনুরোধের সপ্তাহ দুয়েক পর এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠায় বেইজিং। জিডিআই বাস্তবায়নে অংশীদারদের নিয়ে চীন এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, চিঠিতে তা বাংলাদেশকে জানানো হয়। মূলত স্বাস্থ্য, খাদ্য ও জ্বালানি সুরক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির বিকাশ, দক্ষতা উন্নয়ন, সুনীল অর্থনীতি ও বনায়নের ক্ষেত্রে ওই উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য জিডিআই।

বাংলাদেশ কী করছে
চীনের জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগগুলোকে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘জিডিআইয়ের উপাদান নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আরও কয়েক দফা আলোচনা করে এর সব উপাদান ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একটি অবস্থান ঠিক করা যাবে।’

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, জিডিআই কার্যকরে চীন ফ্রেন্ডস অব জিডিআই নামে একটি ফোরাম গঠন করেছে। এতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টি দেশ যুক্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার। ওই ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের কোনো দেশ নেই। চীন চাইছে, বাংলাদেশ ওই ফোরামে যুক্ত হোক।

ওই কর্মকর্তা বলেন, জিডিআইয়ের পদক্ষেপ নিয়ে বেইজিং গত আগস্টে ঢাকার কাছে একটি কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে গত মাসে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, জিডিআইয়ে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তার অধিকাংশই এসডিজিতে আছে। নতুন করে একই জিনিস নিয়ে দুই উদ্যোগের যৌক্তিকতা কোথায়।

জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। এমন এক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি ও উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেখানে স্বাস্থ্য, জ্বালানি, পরিবেশ, সরবরাহব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোতে জোর দেওয়ার বিকল্প নেই।

বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জিডিআইতে এখনো পাশ্চাত্যের কোনো দেশ যুক্ত হয়নি। পাশ্চাত্যকে বাদ দিয়ে চীন এটি করতে চাইছে কি না। এমন এক প্রশ্নের উত্তরে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই উদ্যোগে বিশ্বের সব দেশকেই চীন চায়। এ জন্য এতে যুক্ত হতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জোরদার করতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর চীন জিডিআই নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকাশ্যে না বললেও চীন প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিতে চায়, এসডিজিতে শেষ পর্যন্ত যে ঘাটতি দেখা দেবে, তা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে জিডিআই।

জানতে চাইলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, চীন বা যেকোনো দেশ জিডিআইয়ের মতো উদ্যোগ নিলে তাতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া উচিত। এখানে যেসব উপাদান আছে, তাতে ক্ষতিকর কিছু নেই। শুরুর দিকে যুক্ত হলে বাংলাদেশ এতে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর এই প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো যে যুক্ত হয়নি, তাতে চীনের কোনো ভূমিকা নেই। চীন সব দেশকেই এতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।-প্রথম আলো