গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক খালেদা জিয়াও মানবাধিকার বঞ্চিত: বিএনপি

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক খালেদা জিয়াও মানবাধিকার বঞ্চিত: বিএনপি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেক শোরে এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, স্বাধীনতা-সার্বেভৌমত্বের প্রতীক- তিনিও আজকে তাঁর মানবাধিকার, ন্যূনতম যে অধিকার, তাঁর চিকিৎসার অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে নির্বাসিত অবস্থা রেখে দেওয়া হয়েছে।’

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত আট বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনেছি, আমরা শিশুদের কান্না শুনেছি। এখনো তাদের শিশুরা অপেক্ষা করে থাকে কখন তার বাবা ফিরে আসবে। এরকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার এ কথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, বাংলাদেশে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।’

বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘একটা কথা খুব পরিষ্কার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এই দুইটা পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনো গণতন্ত্র চলতে পারবে না। আজকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবে দেখছি, প্রায় ৬০৭ জন গুম হয়ে গেছে। আমরা দেখছি যে, আমাদের প্রায় সহস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিএনপি; তার ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ঢাকা ও জেলা আদালতে দেখবেন যে, যারা আসামি হয়ে আসছেন তাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী।’

দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ বিচার বিভাগের কাছে মানুষ কোনো বিচার পাচ্ছে না। প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যমকর্মী আছেন, তাঁরা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগনি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার স্বজনদের সন্ধান চেয়ে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টান্যাশনানের প্রতিনিধি উপস্থতি ছিলেন।