তার প্রধানমন্ত্রী থাকার প্রয়োজন নেই: বিএনপি মহাসচিব

তার প্রধানমন্ত্রী থাকার প্রয়োজন নেই: বিএনপি মহাসচিব

গত সোমবার নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতী সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধনের সময় সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাহলে দেশে প্রধানমন্ত্রী আছে কেন? দেশের দুর্ভিক্ষ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তার। তিনি যখন বলছেন, পানি কম খান, খাবার কম খান, গ্যাস-বিদ্যুৎ কম খরচ করেন, তাহলে তো তার প্রধানমন্ত্রী থাকার প্রয়োজন নেই।’

বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁও শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়—গতকাল গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সেটিই প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদের একটি উপনির্বাচনে সমস্ত শক্তি নিয়োগ করেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। না পারার কারণেই নিজেরাই নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এত দিন যে কথাটি বলে আসছি, সেটার সত্যতা প্রমাণিত হলো।’

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এটা আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। তাদের মধ্যে বখরা ঠিকমতো ভাগাভাগি না হওয়ায় কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

নির্বাচন নিয়ে কী হলো না হলো এটা নিয়ে বিএনপির খুব বেশি আগ্রহ নেই বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগ্রহ একটাতেই সেটা হলো, শুধু নির্বাচন সিস্টেম (ব্যবস্থা) নয়; সমস্ত দেশকে যারা বিপদাপন্ন করে ফেলেছে, রাষ্ট্রকে যারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, তাদের সরিয়ে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। আর এটাই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করি।’

সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। গতকাল (বুধবার) চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেখানে যে জনতার ঢল নেমেছে, লাখো মানুষের যে সমাবেশ হয়েছে। সেই সমাবেশে চট্টগ্রামের মানুষ সারা দেশের মানুষকে একটা বার্তা দিয়ে দিয়েছে—এখনই এই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো। এখান থেকে সারা বাংলাদেশে তা ছড়িয়ে পড়বে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।’

সম্প্রতি তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করেছে সরকার। তথ্য পরিকাঠামো হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডই দেওয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার একটি নতুন সার্কুলার দিয়েছে, যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ২৯টি প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে শুরু করে রাজস্ব বিভাগ, সেতু বিভাগ—এ ধরনের যত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ রয়েছে, সেগুলো এর আওতায় আনা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই বিভাগগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকেরা কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না অথবা এসব বিভাগের তথ্যের জন্য সাংবাদিকেরা সেখানে যেতে পারবেন না। এটা যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কত বড় সর্বনাশ হয়েছে, তা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই ২৯টি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া।

এ সময় জেলা বিএনপির সভাপতি মো. তৈমূর রহমান, সহসভাপতি নুর করিম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, আনসারুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।