পদত্যাগ করে মানুষকে রেহাই দিন, আব্দুল্লাহপুরে সমাবেশে মির্জা আলমগীর

পদত্যাগ করে মানুষকে রেহাই দিন, আব্দুল্লাহপুরে সমাবেশে মির্জা আলমগীর

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনো সময় আছে, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দয়া করে পদত্যাগ করেন। দেশের মানুষকে রেহাই দিন। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, খুন ও গুম হয়েছে। এটা আর আমরা দেখতে চাই না।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে পলওয়েল কারনেশন শপিং সেন্টারের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বিকাল ৩টার পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের জন্য ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং যুগপৎ ধারায় একদফা দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, এখনো সময় আছে, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দয়া করে পদত্যাগ করেন। দেশের মানুষকে রেহাই দিন। অনেক নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, খুন ও গুম হয়েছে।

 

এটা আর আমরা দেখতে চাই না। মানুষের মুক্তির জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আপনি দয়া করে পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতায় হস্তান্তর করেন। নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। তারা নির্বাচন করবেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নাই। আমরা পথে নেমেছি। এই আন্দোলনকে আরো তীব্র করতে হবে। আর এদেশে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ ইসি গঠন করতে হবে এবং মানুষকে তার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এখানে সব তরুণ আর যুবকদের মুখ। আমি অত্যন্ত আশাবাদী হচ্ছি। আমরা এই সরকারকে আর দেখতে চাই না। এটা সরকার বলে না। এটা জবরদখলকারী শাসকগোষ্ঠী। তারা জনবিচ্ছিন্ন। তাদের সঙ্গে কোন মানুষ নেই। সেকারণে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও ইসির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি টিম পাঠিয়েছিলো উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই টিমের সদস্যরা তাদের দেশে গিয়ে তারা বলেছেন- বাংলাদেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই কথাগুলো বিশ্বের সবাই বিশ্বাস করেন এবং তারা সবাই বলেছেন। এমনকি জাতীয় পার্টিও (এরশাদ) বলেছে, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থা কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, স্বাভাবিকভাবে যে জামিন পাওয়ার কথা- সেই জামিনগুলো আমাদের ছেলেরা পাচ্ছে না। ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। একটা কারণ, বিএনপি এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের যদি তিন বছরের বেশি সাজা দেয়া যায় তাহলো তারা নির্বাচন করতে পারবে না। ছি কি কাপরুষ, কি ভীতু। এভাবে, এই পদ্ধতিতে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকি দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, চিকিৎসার জন্য জরুরি অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নিয়ে গেছে। এবার দুই দফার তাকে সিসিইউতে নেয়া হলো। তিনি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ। এই সরকারের বিচার বিভাগ মিথ্যা মামলায় ৫ বছর আগে তাকে কারারুদ্ধ করেছেন। এরপরে তাকে গৃহ অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। আর শর্ত দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য তিনি বাইরে যেতে পারবেন না। চিকিৎসা ব্যাপারটা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কারাগারে থাকলেও সব বন্দিকে চিকিৎসা দিতে হবে। সেই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হলে তাকে বিদেশেও পাঠাতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে যখন বেগম জিয়ার জীবন- মরণের সমস্যা, এখন যে অবস্থায় এসেছে দাঁড়িয়েছে যে- যদি তার সঠিক চিকিৎসা না হয় তাহলে তার জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন বন্দি নন। তিনি এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক নম্বর নেত্রী। আজকে এদেশের সব থেকে অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত এবং গণতন্ত্রের জন্য কেউ ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন তার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া এক নম্বর এবং দুই নম্বর তারেক রহমান।

আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, বেগম জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, তাকে যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠানো তাহলে যেকোন দুর্ঘটনার জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে এবং তাদের জবাব দিতে হবে।

এরআগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বেলা ১টা থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ এবং হাতে ফেস্টুন নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন বক্তব্য রাখেন।