দেশকে নির্যাতনের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ: বিএনপি মহাসচিব

দেশকে নির্যাতনের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ: বিএনপি মহাসচিব

দেশের মানুষ এই সরকারকে একমুহূর্ত দেখতে চায় না বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নির্যাতনের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই সরকার সাধারণ মানুষকে ভাতে মারছে। দ্রব্যমূল্য কৃষক-শ্রমিক-কর্মজীবী মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে।

শনিবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী কনভেনশনে (সম্মেলন) এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল, ন্যূনতম মজুরি, শ্রম পরিস্থিতি ও চলমান এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। আয়োজক ছিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি)।

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া (ভয়েস অব আমেরিকাকে) একটি সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করেছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। যে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার কথা বলা হয়, সেটি ৮ কোটি টাকার ওপরে ব্যাংকে জমা আছে। খালেদা জিয়া যেন রাজনীতিতে থাকতে না পারেন, সে জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’    

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জনগণ জেগে উঠেছে। তাদের একটাই দাবি—সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

‘ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে’

সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলেছেন, তারা কেন ক্ষমতা ছাড়বেন? তারা ক্ষমতা ছাড়বেন অনেক কারণে। সবচেয়ে বড় কারণ, তারা দখলকারী। রাতের আঁধারে ক্ষমতা দখল করেছেন।

শ্রমিক-কর্মচারীরা দুঃসহ সময় পার করছে বলে সমাবেশে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শ্রমিকদের আয় বাড়ছে না। হালাল উপার্জন দিয়ে শ্রমিকেরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, সরকার নড়বড় করছে। দেশ-বিদেশে কোথাও জায়গা পাচ্ছে না। আরেকটা বড় ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বর্তমান সরকারের পতন এখন সময়ের দাবি।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অভিযোগ করেন, ৭৮ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিনা চিকিৎসায় সরকারের অবহেলায় মারা যাচ্ছেন।

সরকারের ‘পায়ের তলায় মাটি নেই’ দাবি করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, পাঁচ বছর আগে শ্রমিকের যে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা ছিল, সেটির ক্রয়ক্ষমতা এখন চার হাজার টাকায় নেমেছে।
কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান (শিমুল বিশ্বাস)।

আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

ছাত্রদের পর এবার শ্রমিক ঐক্য

বেশ কয়েক দিন ধরে এক দফার আন্দোলনে ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবীদের পৃথক মোর্চা গড়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। সরকার হটানোর চূড়ান্ত আন্দোলনে এই তিন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ আরও দৃশ্যমান করাই এর লক্ষ্য। দলটির নেতারা মনে করছেন, সরকারবিরোধী সব ছাত্র-শ্রমিক সংগঠন এবং পেশাজীবীকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামানো না গেলে গণ-অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ১৫টি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ নামে নতুন ছাত্রজোট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর আজ সরকারবিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে কনভেনশন করা হলো।

কনভেনশনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। কনভেনশন থেকে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবি আদায়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন শ্রমিকনেতারা। এই কনভেনশনের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে।