৭৮ হাজার বছরের পুরনো সমাধি!

৭৮ হাজার বছরের পুরনো সমাধি!

আফ্রিকায় গিয়ে বিজ্ঞানীরা এমন একটি দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছেন যা দেখে আমার আপনার চোখে পানি আসতে বাধ্য। আফ্রিকার একটি গুহায় উদ্ধার হয়েছে প্রাচীন একটি সমাধিস্থল, যা প্রায় ৭৮ হাজার বছর পুরনো। গুহায় নিশ্চিন্তে শায়িত রয়েছে বছর তিনের এক শিশুর দেহ। বালিশে মাথা রেখে যেন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, শিশুটির দেহের ওপরের অংশটি একটি কাপড়ে মোড়া।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তারা সম্ভবত আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীনতম সমাধিস্থল খুঁজে পেয়েছেন। যেটি কেনিয়ার উপকূলের কাছে পঙ্গা ইয়া সায়েদি নামে একটি গুহায় অবস্থিত। গুহায় সোয়াহিলি ভাষায় লেখা ছিল 'মটোটো', যার অর্থ 'শিশু'। গবেষকরা বলেছেন, এই আবিষ্কারটি আদিম মানুষের সামাজিক প্রবৃত্তির দিকে আলোকপাত করবে বলে মত বিজ্ঞানীদের।

স্পেনের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন হিউম্যান ইভোলিউশন (সিএনআইইএইচ) এর পরিচালক এবং নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার প্রধান লেখক মারিয়া মার্টিনোন টোরেস বলেছেন, "এই ধরণের মানসিকতা হোমো সেপিয়েন্সকে চিহ্নিত করে"। শিশুটিকে একটি জনবসতিপূর্ণ স্থানে শায়িত করা হয়েছিল, যেখানে এই সম্প্রদায়টি বাস করতো। এটি থেকে সেই সময়ের মানব জীবন এবং মৃত্যুর সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন বিজ্ঞানীরা। টোরেসের মতে, একমাত্র মানব গোষ্ঠী মৃত্যুর পর তার প্রিয়জনের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে থাকে, অন্য প্রাণীগোষ্ঠীতে যা দেখতে পাওয়া যায় না। হোমো স্যাপিয়েন্স-রা আফ্রিকাতে ৩ লাখেরও বেশি বছর আগে প্রথম উপস্থিত হয়েছিল, পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যে শিশুটির হাড় উদ্ধার হয়েছে তাতে দেখা গেছে, বুকের কাছে হাটু মুড়ে দেহটি শায়িত করা হয়েছিল। কাঁধের হাড় এবং দুটি পাঁজরের অবস্থান দেখে বোঝা গেছে বিশেষ কিছু পদার্থ দিয়ে দেহটি আবৃত করে রাখা হয়েছিল। যাতে অনেকদিন সেটি সতেজ থাকে।

মার্টিন-টরেস বলেছেন, এতো ছোট বয়সে প্রিয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় সেই জনজাতি যে কতটা শোকগ্রস্ত ছিল তা অনুমান করা যায়। মার্টিন-টরেস এটিকে মৃত্যুবরণকারীদের সঙ্গে আদিম মানবজাতির সংযোগ বজায় রাখার একটি প্রক্রিয়া বলে বর্ণনা করেছেন। ১,২০,০০০ বছর পূর্বে ইসরায়েলেও আদিম মানব জাতির এরকম একটি সমাধিস্থল আবিষ্কৃত হয়। তবে এটি এখনো স্পষ্ট নয়, এই ধরণের শেষ কৃত্যের প্রক্রিয়া আফ্রিকায় প্রথম শুরু হয়েছিল, না আফ্রিকার বাইরে। আফ্রিকায় যে শিশুটির সমাধিস্থল পাওয়া গেছে , তা থেকে জানা গেছে সেই সময়ের মানবজাতির পেশা ছিল শিকার করা, কারণ গুহা থেকে উদ্ধার হয়েছে হরিণ প্রজাতির প্রাণীর হাড়গোড়। এছাড়াও বর্শার মত কিছু ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে যা সাধারণত শিকারের কাজে লাগে।

এমজে/