সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘বেগম জিয়াকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে। এই জন্যই বর্তমান অবৈধ সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। কিন্তু আজ না হয় কাল এই সত্য প্রমাণিত হবেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের জিলা স্কুল মাঠে এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার দিয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। আর তাঁর সহধর্মিণী ও দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। আন্দোলন করতে হচ্ছে, এটা লজ্জার। শেখ হাসিনা যখন গ্রেপ্তার ছিলেন, তখন প্রথম খালেদা জিয়া তাঁর মুক্তির দাবি তুলেছিলেন। অথচ মিথ্যা মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিভাগীয় সমাবেশ করতে বাধার অভিযোগ তুলে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘বরিশালে এবার আসার সঙ্গে সঙ্গেই ধাক্কা খেয়েছি। বিভিন্ন সময় বরিশালে এসেছি, তবে এমন ধাক্কা খাইনি। প্রথমে শুনলাম, আমাদের সমাবেশ করার জায়গা দেওয়া হবে না। পরে শুনলাম, নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। মঞ্চ দুইবার করা হয়েছে। একবার ঈদগাহ মাঠে, তারপর রাত ১২টায় আবার তা খুলে জিলা স্কুল মাঠে। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। এমন অত্যাচার কোথাও দেখিনি। যারা স্বাধীন মাটিতে কথা বলতে দেয় না, তারা কারা?’
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) বলেন, ‘এই দেশের সরকার চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না। জনগণের কথা এরা কানে নেয় না। কেন না, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। এরা ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে না। এরা খুনি সরকার। খালেদা জিয়া এই সরকারের ক্ষমতায় থাকায় বড় বাধা। পুলিশি জোরে আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সারা দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থতা কামনা করছে। তারা সমাবেশ করেছে তাতে সরকার বাধা দিচ্ছে। তেলসহ সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কিন্তু তাতে সরকারের কিছু আসে যায় না। শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবি যখন জানালেন, তখন সরকারের টনক নড়েনি, কিন্তু যখন তাঁরা সড়কে নামলেন, তখন তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হলো। তিনি আরও বলেন, ‘আজ সাংবাদিক নির্যাতনকারী ডিসিকে মাফ করে দেওয়া হচ্ছে, আজ সন্ত্রাসীদের সাজা মাফ হয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুখের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল আলম, নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সহদপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
সমাবেশ সফল করতে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিলসহকারে যোগদান করেন। পাশাপাশি সমাবেশ ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। সমাবেশস্থলের আশপাশে জলকামান ও এপিসি রাখা হয়।