রংপুরে বিএনপির সমাবেশ শুরু, মাঠে ঠাঁই নেই, অলিগলিও কানায় কানায় পূর্ণ

রংপুরে বিএনপির সমাবেশ শুরু, মাঠে ঠাঁই নেই, অলিগলিও কানায় কানায় পূর্ণ

বেলা ১২টায় পবিত্র কোনআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। মঞ্চে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। মূল পর্ব শুরু হবে কিছুক্ষণ পর। এরই মধ্যে রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাঁও মাঠের সমাবেশস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। মাঠে দাঁড়ানোর ঠাঁই নেই। তীব্র রৌদ্রের মধ্যেও কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনতে মুখিয়ে আছেন বিভাগের আট জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে মাঠে জায়গা না পেয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়কের অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থলের চারদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ। হাঁটা চলার মতোও নেই পরিবেশ।

এদিকে এখনো বিভিন্ন জেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিলে নিয়ে আসছেন নেতাকর্মীরা। তবে মাঠ ও রাস্তাঘাট নেতাকর্মীদের চাপে মিছিলগুলো সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে পারছে না।

এদিকে, রংপুরের সমাবেশের মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি ফাঁকা আসন রাখা হয়েছে। এর আগে, ময়ময়সিংহ ও খুলনা বিএনপির সমাবেশে এমনটি রাখা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা বলছেন, অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে সরকার। তিনি মুক্ত থাকলে এখানে উপস্থিত থাকতেন। তাই আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে বিএনপি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির চতুর্থ গণসমাবেশ চলছে।

বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছে যে, আগামী সাধারণ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী সেটির সুযোগ নেই বলে তা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন।

শুক্রবার বিকেল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকে এবং তাদের অনেকেই সেখানে রাত কাটায়।

আজকের সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ, প্রথমটি চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি হয়েছে খুলনায়।

আগামী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সমর্থন জোগাতে অন্য বিভাগীয় সদর শহরেও অনুরূপ সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে দলটি।

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে বিএনপি।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে রংপুর শহর কার্যত মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়।

সকাল থেকেই বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন এবং কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মী সেখানে রাত কাটান।

শুক্রবার সকাল থেকে রংপুর ও সারাদেশের মধ্যে ট্রেন ছাড়া যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ থাকলেও বিভাগের আট জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা অতিক্রম করে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, শনিবার তাদের ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্ভাব্য বাধা ও হয়রানি এড়াতে তারা সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।

সমাবেশকে সফল করতে লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ট্রেন, মোটরবাইক, অটোরিকশা, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্নভাবে রংপুরে আসেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ অঞ্চলে ধর্মঘট পালন করছে।

তবে রংপুরের ক্ষমতাসীন দল পরিবহন ধর্মঘটের সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।

মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন অভিযোগ করেন, তাদের দলের সমাবেশে লোকজন যাতে না আসে সেজন্যই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

গত সপ্তাহে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তবে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাধা অতিক্রম করে সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন।